Bangla Audio Story Suspense|ISLAND X-Final Part|Aritra Das|Science fiction Audio story
-“ক্যাপ্টেন সিংএর প্রতিটি বিবরণ সঠিক, কারণ অন্য
সাক্ষীদের বক্তব্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ সঙ্গতি রেখে চলেছে আপনার বিবরণ। সার্জেন্ট বরাট
ও কয়েকজন জওয়ানের মৃত্যু অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ঘটনা; কিন্তু বাকিদের নিরাপদভাবে বের করে
আনতে পারার কৃতিত্ব এককভাবে আপনারই।
আমি জানি যে আপনার মনে সঙ্গত কারণেই অনেকগুলি প্রশ্ন
আছে; আর তার উত্তর জানবার অধিকার আপনি অর্জন করেছেন। তবে আপনাকে এও জানিয়ে রাখি আপনাকে
যে তথ্যগুলি জানাব তার কিছুটা আমরা জেনেছি গবেষণা করে, কিছুটা বলব অনুমানের ওপর ভর
করে। ‘কল্পনা বিনে গতি নেই’- মানুষ এখনো প্রযুক্তির সেই স্তরে পৌঁছয় নি যাতে সে স্বয়ং
ঈশ্বরকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে। এই অজ্ঞাতনামা দ্বীপটির প্রকৃত রহস্য কখনোই জানা সম্ভব
নয়, কারণ সত্যানুসন্ধানের সেই পথ সম্পূর্ণ বন্ধ!
‘আইল্যাণ্ড এক্স’এ বাসা বেঁধেছিল অতি উন্নত ধীশক্তির
অধিকারী কোন এক প্রজাতি। এবারে তারা পৃথিবীর বাইরে থেকে আসা কেউ, নাকি কোন প্রাচীন
পার্থিব, তারা এখানে ছুটি কাটাতে এসেছিল নাকি পৃথিবী দখল করতে তা ঠিক পরিষ্কার নয়;
তবে তাদের উদ্দেশ্য যে সাধু ছিল না তা তাদের আচরণ থেকেই পরিষ্কার। এমনও হতে পারে যে
এরা কোন ‘স্কাউট’ টিম, রিপোর্ট তৈরি করতে এসেছিল, সবকিছু দেখে নিয়ে আবার ফেরৎ চলে গিয়েছে
ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে; হয়তো আবার ফেরৎ আসতে পারে দল বেঁধে! প্রসঙ্গক্রমে জানিয়ে
রাখি এই একইদিনে একইরকম বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত জুড়ে-
স্পেন, মেক্সিকো, বলিভিয়া, পেরু, ইরাক, ইজিপ্ট, ইংল্যাণ্ড, জাপান, ইন্দোনেশিয়া – বিশ্বের
প্রতিটি প্রান্ত থেকে। আর একটি লক্ষণীয় বিষয়, এই জায়গাগুলির প্রতিটিতেই কিন্তু প্রাচীন
সভ্যতাগুলির নির্মাণ হয়েছিল। এই যোগাযোগ কিন্তু কাকতালীয় নাও হতে পারে!
এই উন্নত প্রাণীগুলি ‘আইল্যাণ্ড এক্স’-এ এসে প্রথমেই
নিজেদের একটি সুরক্ষার ব্যবস্থা করে নিয়েছিল যাতে কোন ‘বাইরের লোক’ হুট করে এসে উঁকি
না মারতে পারে তাদের হেঁসেলে। এই কারণে তারা তৈরি করল একটি সুরক্ষা-বলয়; একটি শক্তিশালী
তড়িৎ ক্ষেত্র, একটি শক্তিপুঞ্জ যাকে আপনারা কাঁচের দেওয়াল বলে ভুল করেছিলেন। আবারও
বলছি- কেন এই দেওয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে আপনারা ‘শক্’ খান নি সেই কারণ ব্যাখ্যা করবার
সামর্থ্য আমার নেই; এক্ষেত্রে একটি প্রধান বাধা- প্রযুক্তির অন্তরায়!
সুরক্ষা তো হল, কিন্তু টেস্টিং-এর জন্য ‘লাইভ স্টক’
কোথা থেকে পাওয়া যাবে? এইখানেই বোঝা যায় তাদের নারকীয় বুদ্ধির দৌড়!
যে প্রাণীগুলিকে আপনারা দেখেছেন সেগুলি কিন্তু
ঐ উন্নত ধীশক্তির প্রাণী নয়! তারা বুদ্ধিবৃত্তিতে বাঁদরের থেকে এগিয়ে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ
নেই, তাদের মস্তিষ্কও জটিল; কিন্তু তাদের মুখবিবর, বুদ্ধির আয়তন ও জিনের গঠন পরিষ্কার
বলে দিচ্ছে যে তারা উন্নত বুদ্ধি নয়। তাদের ব্যবহার করবার উদ্দেশ্য দুটি। প্রথমত-
‘ওয়াচ্ ডগ’। সরাসরি রৌদ্রের তাপ তারা সহ্য করতে পারত না, কিন্তু এনার্জি ঠাসা কাঁচের
ঘরের ভিতর অনায়াসে বেঁচে থাকত! এইভাবেই হয়তো তারা দেখত কেউ আসছে কি না ধারে কাছে।
দ্বিতীয় কারণটাই মূখ্য। এই সকল প্রাণীদের জাগতিক
দেহটাকে ব্যবহার করা হত দ্বীপে আগত মানুষদের প্রলুব্ধ করে কাঁচের ঘেরাটোপের এপারে নিয়ে
আসতে। কিরকম? মনে পড়ে, আপনি বলেছেন প্রথমবার যখন আপনি ত্রিশ-চল্লিশ ফুট দূর থেকে দেখেন,
আপনি কাঁচের দেওয়ালের ও প্রান্তে বিকটদর্শন দুটি প্রাণী দেখতে পান। কিন্তু দ্বিতীয়বারে
আপনিও দেখতে পান সার্জেন্ট বরাটের স্ত্রী-পুত্র পরিবারকে, কাঁচের দেওয়াল থেকে দুই-আড়াই
ফুট দূরত্বে দাঁড়িয়ে, আর বিকটদর্শন প্রাণীদুটিকে সেখানে আর দেখা যায় নি- তাই তো?”
মাথাটি দুবার ওপর-নীচ করলাম। বিষ্মিত হয়ে শুনছিলাম
ডাঃ আগাশের কথা।
-“মানুষের মস্তিষ্কের ভিতরেও কিন্তু নিরন্তর তড়িৎ-সংকেত
আদান-প্রদান হয়। আমার ধারণা- কাঁচের দেওয়ালের কোন একটি নির্দিষ্ট দায়রার মধ্যে এলে
মানব-মস্তিষ্কের ভিতরের তড়িৎ-সংকেতে কোন ভুল-ভ্রান্তি ঘটতে থাকে, যার জেরে মানুষ তার
চোখের সামনে পূর্বস্মৃতিকে জীবন্ত দেখে! আর এই কাজে ব্যবহৃত ‘জীবন্ত দেহ’গুলি কারা?
কেন, এই বিকটদর্শন প্রাণীগুলি! বোঝা গেল?”
এতক্ষণে বিষয়টা স্পষ্ট হল আমার কাছে। আমি অনাথ,
ফলে আমার পিতা-মাতা বা কোন নিকট পরিজনের স্মৃতি নেই। অপরদিকে সার্জেন্ট বরাট ও তাঁর
পরিবারের সঙ্গে অন্তরঙ্গতা আমার মনের স্মৃতিতে জায়গা করে নিয়েছিল। তাই কাঁচের দেওয়ালের
কাছে এসে আমিও তাদেরই দেখতে পাই, যেমন দেখেছিলেন সার্জেন্ট বরাট! আর এই বিকটদর্শন প্রাণীগুলি
হল জাগতিক মাধ্যম, যার মধ্য দিয়ে আমরা দেখতে পেয়েছি আমাদের স্মৃতিগুলিকে। ক্ষেত্রবিশেষে
এই বিকটদর্শন প্রাণীদের দেহগুলি কারো চোখে কখনো হয়েছে পিতা, কখনো মাতা, কখনো পুত্র,
স্ত্রী, কন্যা- যার যে রকম স্মৃতি সেই অনুযায়ী স্ব স্ব ব্যক্তির চোখে! এটাই কারণ সকলের
নিজের পরিজনদের দেখতে পাওয়ার!
একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল আমার বুক চিরে।
-“বুঝলাম জাদুসম্রাট কে. কে. র এই ‘ম্যাজিক স্পেল’এর
খেলা! একটা কথা বলুন তো- মানুষগুলিকে কাঁচের দেওয়ালের বাইরে এসে মারত কারা? আর কি জন্য?”
-“বিকটদর্শন প্রাণীগুলিই। জাগতিক দেহধারণ করলে
খাবার তো লাগবেই, ক্যাপ্টেন সিং!”
-“তাহলে আমাদের শত্রুরা কারা ছিল?”
একথায় মাথা নীচু করে একটু চিন্তা করে নিলেন ডাঃ
আগাশে। তারপর বললেন-
-“এটা এমন একটি প্রশ্ন যা কোনদিন উত্তর দেওয়া সম্ভব
নয়। কারণ, কোন পাকাপোক্ত প্রমাণ নেই এর স্বপক্ষে। তবে এই বিষয়ে আমার ধারণা- পর্দার
পিছনে থেকে যাওয়া আসল খেলোয়াড়দের জাগতিক কোন দেহ ছিল না; তারাও ছিলেন শক্তিতন্ত্রের
সমণ্বয়ে গঠিত কোন উপাদান যাদের দেহের মূল ভিত্তি শক্তি বা এনার্জি।”
-“তার মানে আপনি বলতে চাইছেন তারা বায়ু দিয়ে তৈরি
কিছু-”
-“বললাম যে, বায়ু নয়, শক্তি! একটু ভেবে দেখুন ক্যাপ্টেন,
আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন। যে কাঁচের দেওয়াল ওখানে তৈরি হয়েছিল তার অস্তিত্বই বাস্তবজগতে
সম্ভব নয়। ওটি থিয়োরিটিক্যালি তৈরি করতে হলে যে শক্তি লাগত তা একজায়গায় একত্র করবার
মত প্রযুক্তিও আমাদের নেই, আর থাকলে আমরা তা নিয়ন্ত্রণও করতে পারতাম না; কারণ অত শক্তিকে
এরকম নিখুঁত ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা কোন জাগতিক দেহের পক্ষে সম্ভব নয়! ঐ সুবিশাল শক্তিপুঞ্জ
বা ‘ফায়ার বল’ যখন ফেটে গেল সেই সময়টি মনে পড়ে আমাদের আশপাশ কিরকম আন্দোলিত হয়েছিল?
এর থেকে একটা ধারণা করা যায় কতটা শক্তি একত্র হয়েছিল একজায়গায়! আর এখান থেকেই ‘অদৃশ্য
অশরীরী’দের অনুভব করলা-”
-“এ হতেই পারে না, ডাক্তার।”
-“আপনি যখন মানতে চাইছেন না তখন মানবেন না; কিন্তু
এরকম দেহহীনদের উল্লেখ কিন্তু আমাদের পুরাণেও আছে! স্বর্গের ও সেখানকার অধিবাসীদের
যে শ্রেণীকরণ করা আছে আমাদের পুরাণে তা একবার পড়ে দেখবেন। আমার এই মুহুর্তে মনে পড়ছে
না, তবে খুব সম্ভবতঃ তৃতীয় বা চতুর্থ স্বর্গের দেবতাদের থেকে সপ্তম স্বর্গের দেবতাদের
সম্পর্কে বলা হয়েছে অদৃশ্য, কায়াহীন, বায়ুবৎ! তাঁদের জীবনকালের যে ব্যাপ্তী বলা হয়েছে
তা জাগতিক দেহধারণ করে অসম্ভব অতদিন টিঁকে থাকা-”
-“কিন্তু, সে তো কল্পনা!”- সজোরে প্রতিবাদ করে
উঠলাম আমি।
-“কল্পনা? হতেও পারে। আবার নাও পারে। পুরনো সময়ে
অনেক ভরপুর সভ্যতা রাতারাতি বিনষ্ট হয়ে গিয়েছে; আমাদের সিন্ধুসভ্যতাও কিন্তু সেই তালিকায়
পড়ে! সেই বিবরণের সঙ্গে মনে হল ৬ই অগাস্ট রাত্রের চোখে দেখা ধ্বংসের কিছুটা মিল খুঁজে
পেলাম। আপনি কি জানেন, দ্বীপটি সম্পূর্ণ জলের নীচে চলে গিয়েছে? এ আমার মনের ভুলও হতে
পারে। এরকম ধ্বংস তো আধুনিক বিশ্ব অনেকবার দেখেছে। অনেক যুদ্ধে। আর তা মানবদের তৈরি
করা। এ নিয়ে তর্ক নিষ্প্রয়োজন। যাই হোক, সুন্দরবনের ঐ অংশে জীবন আবার স্বাভাবিক ছন্দে
ফিরে গিয়েছে। সমগ্র বিশ্বেই তাই। এর অর্থ- আমরা আপাতত বিপন্মুক্ত। মেজরসাব!”
সাক্ষাৎকার শেষ হয়ে যাওয়ার পর ঘরটি থেকে বেরিয়ে
এলাম। বাইরের লন পেরিয়ে একটি জায়গায় সুন্দর একটি বাগান করা, তার ধারে একটি বেঞ্চে বসলাম।
মাথা বন্ বন্ করে ঘুরছিল। না জেনেশুনে কাদের মাঝখানে গিয়ে পড়েছিলাম আমরা? সেনাদের নিরুদ্বিগ্নমনা
হতে হয়, কিন্তু এরকম অদ্ভুত অভিজ্ঞতা কজনের হয়? আর তাছাড়া, এই যুদ্ধে আমার নিজের রক্ত
ঝরেছে; আমার বন্ধু, আমার দাদার মত সার্জেন্ট বরাটকে খুইয়েছি আমি। আমার সামনে তাঁর রক্ত
ঝরেছে, হাঁ হয়ে সেই দৃশ্য দেখেছি আমি! এরকম হতভাগ্য আর কজনে হয়?
-“সাব্, মেজরসাব এত্তেলা দিলেন। আফগানিস্থান-এর
ব্যাপারটা নিয়েই বোধহয়-”
জমাদার ছোটুলালের ডাক পেয়ে উঠে পড়লাম মেজর রাঠৌরের ঘরের উদ্দেশ্যে, চোখের জল মুছতে মুছতে। সৈনিকদের কাঁদলে চলে না-
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আমাদের ব্লগগুলি আপনাদের কেমন লাগছে? অবশ্যই জানান আমাদের-