The Legacy of Ram: Prologue- Part4 (দ্যা লেগ্যাসি অফ্ রাম: আদি পর্ব- অধ্যায়৪)- A mystery, post-apocalyptic fiction Bengali Novel series by Aritra Das
দ্যা লেগ্যাসি অফ্ রাম- আদি পর্ব (The Legacy of Ram- Prologue): অধ্যায়৪ (PART4)
- A Bengali science fiction, mystery, suspense thriller and post-apocalyptic fiction novel series by Aritra Das, the Bengali writer
The Legacy of Ram: Prologue (আদি পর্ব) Part4 |
[দ্যা লেগ্যাসি অফ্ রাম- আদি পর্ব (প্রলগ) গল্পটির প্রথম তিনটি পর্ব প্রকাশিত হয়ে গিয়েছে, পেজে গল্পের শেষে অন্যান্য লিঙ্কগুলি পাওয়া যাবে। অবশ্যই পড়বেন]
দ্যা লেগ্যাসি অফ্ রাম: আদি পর্ব- অধ্যায়৪
অধ্যায়৩ থেকে শেষের কিছুটা অংশ-
-“অভিযুক্ত…
দ্যূহ… অভিযুক্ত… দ্যূহ… দ্যূহ…”
একটি কথাই পর্যায়ক্রমে উচ্চারণ করে চলেছে ‘মদন’! অস্পষ্টভাবে ‘ব্যূহ’ কথাটি মহর্ষির কানে শোনাল ‘দ্যূহ’। কিন্তু সেদিকে তখন মন নেই তাঁর, তিনি শুধু বিস্মিত এই ভেবে যে এই আদিম মানব দম্পতি তা হলে কথা বলতেও সক্ষম! তিনি আবিষ্ট হয়ে তাকিয়েই থাকলেন তাদের দিকে।
-“বিচারকরা সকলেই আপনার জন্য অপেক্ষমান, মহর্ষি! চলুন, আর বেশি দেরি করা উচিৎ হবে না। আমি উপযাচক হয়ে এগিয়ে এসেছিলাম আপনাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আসুন।”
-“আমাকে পথ দেখান, ভগবান!”
মাথা নীচু করে ভগবান শ্রীবিষ্ণুদেবের পিছু পিছু এগিয়ে চললেন মহর্ষি মার্কণ্ডেয়...
[পূর্ব প্রকাশিতের পর...]
[বিচারপর্ব]
-“মহর্ষি মার্কণ্ডেয়! ‘কালাতীত’সংঘের বিধিভঙ্গের গুরুতর অভিযোগে
অভিযুক্ত আপনি! স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞ্যানে আপনি এই সংঘের বিধি উল্লঙ্ঘণ করেছেন, শাস্তি
আপনাকে পেতেই হবে।”
প্রশস্ত, প্রায়ান্ধকার
কক্ষে আসামীর জন্য নির্দিষ্ট করা আসনে তখন একা বসে মহর্ষি মার্কণ্ডেয়। তাঁকে তিনদিক
দিয়ে ঘিরে অর্ধচন্দ্রাকৃতি আকারে বিচার-বন্ধুদের বসবার আসনগুলি একসারিতে বিন্যস্ত;
সামনে কিছুটা দূরে একটি উঁচু বেদীর মত স্থলে পাঁচটি আসন; পঞ্চ বিচারকবর্গের বসবার জায়গা
সেটি। ঘরের মধ্যে অন্ধকার, একদিক থেকে সোজা আলো এসে পড়েছে মহর্ষি মার্কণ্ডেয়র প্রশান্ত
মুখে। সেই মুখে কোন উদ্বেগ নেই!
বর্তমানে ন্যায়ালয়
সম্পূর্ণ ভর্তি। বিচার-বন্ধুদের কোন বসবার আসন আর ফাঁকা নেই। অন্ধকারে সামনে বসা পাঁচজন
মূল বিচারকের শুধু প্রতিচ্ছবিই প্রতীয়মান, তাঁদের কারোর মুখ দেখা যাচ্ছে না। তার প্রয়োজনও
নেই, মহর্ষি মার্কণ্ডেয় জানেন বিচারকের আসনে কারা আসীন। ভগবান বিষ্ণুদেব, মহাদেব মহেশ্বর,
ভগবান বেদান্ত, ভগবান গণপতি ও দেবরাজ ইন্দ্র স্বয়ং। একজন প্রাজ্ঞ, বৃদ্ধ পুরুষ, বাকি
সকলেই যুবা। চুপ করে বসে রইলেন মহর্ষি মার্কণ্ডেয়, আশু ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে।
-“এই বিষয়ে আপনার
বক্তব্য শুনতে চাই মহর্ষি! বিধি ভাঙবার স্বপক্ষে আপনার অভিমত কি?”
-“এই নিয়ে দ্বৈরথের
কোন জায়গাই নেই, দেবরাজ! বিধি ভঙ্গ হয়েছে, এবং আমি তা স্বজ্ঞানে ভেঙেছি।”
-“কারণ ব্যক্ত
করুন।”
একটু চুপ করে
বিষয়টি ভালো করে একবার ভেবে দেখলেন মহর্ষি মার্কণ্ডেয়। তারপর বললেন-
-“মানবমস্তিষ্ক
স্বততঃই সীমাবদ্ধ, দেবরাজ। যা দৃশ্যমান হয়ে ধরা দেয় নি তার চোখে, তাকে কখনোই সে কল্পনা
করতে পারে না। তাই আমি চেয়েছিলাম ধ্বংসের এই আবহ ফুটে উঠুক মহর্ষি বাল্মীকির চোখের
সামনে। তিনি কল্পনায় নয়, বাস্তবে দেখুন ভবিষ্যত যুদ্ধের কিছু খণ্ডচিত্র; অত্যাধুনিক
যুদ্ধের একটি বাস্তবিক রণাঙ্গন, যাতে অংশগ্রহণকারী যোদ্ধারা লড়ছেন তীর-ধনুক-বর্শা-বল্লম
দিয়ে নয়, বরং এমন সব অস্ত্র দিয়ে যা তিনি কোনদিন কল্পনাতেও দেখেন নি। ‘বিস্ফোরণ’বলতে
কি বোঝায়, তার সংজ্ঞা কি, কিরকম ভয়ংকর তার প্রভাব- তাঁর চোখের সামনে এই অজানা দৃশ্যগুলি
ধরা না দিলে তিনি তাঁর উপাখ্যানে তা ফুটিয়ে তুলবেন কি করে? অসম্পূর্ণ থেকে যাবে তাঁর
রচনা, ব্যর্থ হয়ে যাবে আমাদের উদ্দেশ্য! তাঁর রচনাকে বাস্তবিক করে তোলবার উদ্দ্যেশেই
আমার এই বিধি-বহির্ভূত পদক্ষেপ গ্রহণ। এতে আমার কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ বা অভিসন্ধি
ছিল না।”
-“তাই আপনি নিজে
নিজে সিদ্ধান্ত নেন মহর্ষি বাল্মীকিকে ভবিষ্যতের চালচিত্র দর্শন করানোর। ভালো। তা এক্ষেত্রে
ওঁনাকে ভবিষ্যত মানবদের যুদ্ধই বা দেখালেন কেন? অতীতে নিয়ে গেলেন না কেন? যাদের কথা
উনি ব্যক্ত করবেন, তাদের শারীরিক গঠন ও উন্নত সভ্যতার খুঁটিনাটি- দুইয়ের সঙ্গেই তিনি
পরিচিত হতে পারতেন! সেক্ষেত্রে উপাখ্যান আরও জীবন্ত হত, নয় কি?”
-“গোড়াতে আমার
সেই ইচ্ছেই ছিল, দেবরাজ! কিন্তু যাদের বর্তমান মানবগোষ্ঠী কোনদিন চোখে দেখে নি, যাদের
অস্তিত্ব সম্পর্কেও বিন্দুমাত্র ধারণা নেই যে মানবগোষ্ঠীর, সেই বিস্মৃত সভ্যতা ও তার
অধিবাসীদের হঠাৎ করে চোখের সামনে দেখলে পরে মহর্ষি বাল্মীকির অবস্থা হতে পারত প্রথম
যুগের আমারই মত- বিস্মিত, হতবাক, মূঢ়! তাছাড়া, নিজে একজন মানব হওয়ার সুবাদে জোরগলায়
বলতে পারি, আমাদের মস্তিষ্ক ‘সাদৃশ্যের’ মুখাপেক্ষী; কল্পনা তখনই ডানা মেলে ভালো যখন
বিষয়টি মানবজীবনের স্বাভাবিক চেতনের সঙ্গে ভালো খাপ খায়। সবদিক বিচার করে তবেই আমি
মানবপ্রজাতির ভবিষ্যতের দিকে মহর্ষি বাল্মীকিকে ঠেলে দিই, প্রভু; অতীত বাসিন্দাদের
দিকে নয়। নচেৎ এতে ইষ্টের থেকে অনিষ্টের সম্ভাবনা ছিল বেশি।”
স্পষ্ট বোঝা
গেল তাঁর এই সহজ-সরল স্বীকারোক্তি বিচারকদের মনে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে,
কারণ পাঁচজনই মহর্ষির এই বক্তব্য শোনবার পর মাথা নীচু করে নিজেদের মধ্যে চাপা গলায়
কিছু পরামর্শ সেরে নিলেন। অতঃপর, দেবরাজ ইন্দ্র আবার ফেরৎ এলেন প্রশ্নোত্তর পর্বে-
-“আপনার উদ্দেশ্যটা
স্পষ্ট হয়েছে আমাদের কাছে, মহর্ষি। এ বিষয়ে আমরা একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি, তা অবশ্যই
স্পষ্ট করা হবে আপনার কাছে। কিন্তু তার আগেই একটি বিষয় আছে যা আমাদের পরিষ্কার করে
বুঝে নেওয়া দরকার। আপনার কাছে আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আছে, আশা করব সঠিক উত্তর
আপনি দেবেন।”
-“আপনি প্রশ্ন
করুন দেবরাজ, উত্তর দিতে আমি অবশ্য বাধ্য।”
-“বেশ। তাহলে
বলুন, কার নির্দেশে আপনি এ কার্য করেছেন?”
এই প্রশ্নে একটু
হতচকিত মনে হল মহর্ষি মার্কণ্ডেয়কে। তিনি বিহ্বল মুখে তাকিয়ে থাকলেন সামনে আসীন পঞ্চবিচারকবর্গের
দিকে। কিছু সময় পর সম্বিৎ ফেরৎ পেয়ে তিনি প্রতিপ্রশ্ন করলেন-
-“এ প্রশ্নের
অর্থ, দেবরাজ?”
-“এই প্রশ্নের
অর্থ না বোঝবার মত মূর্খ তো আপনি নন, মহর্ষি! আর, আমরাও নই। আপনি আমাদের ঘর থেকে একটি
ঠাঁইনাড়া সময়-যান তুলে নিয়ে চলে গেলেন; তা ব্যবহার করলেন এবং কাকতালীয়ভাবে কেউ তা জানতে
পারলেন না- কোন উচ্চস্তরের দেবতা ব্যতীত এ কার্য অসম্ভব! আপনি আমাদের ভুল বোঝানোর চেষ্টা
করলেও আমরা বুঝব না। তাই, সত্য স্বীকার করে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আমাদেরও
তলিয়ে দেখা দরকার, এটা কোন বিদ্রোহের সূচনার ইঙ্গিতবাহী কি না। নামটা বলুন!”
এই প্রথম সমগ্র
বিচারপদ্ধতিতে বিহ্বল দেখাল মহর্ষি মার্কণ্ডেয়কে; অসহায়ের মত মাথা নীচু করে বসে থাকলেন
তিনি, যেন বুঝে উঠতে পারছেন না কি উত্তর দেবেন।
-“আমরা আপনার
উত্তরের প্রতীক্ষায় আছি, মহর্ষি মার্কণ্ডেয়!”- দেবরাজ ইন্দ্রের কঠিন গলা ভেসে এল সামনের
দিক থেকে।
অবশেষে জোর করে
মাথা উঁচু করলেন তিনি। সামনের দিকে বসা পাঁচজন বিচারককেই পর্যায়ক্রমে একবার করে দেখে
নিলেন তিনি; তারপর গলা খাঁকড়িয়ে বললেন-
-“এ বিষয়ে আমি
মুখ খুলতে অপারগ, দেবরাজ! আপনি যথার্থই ধরেছেন- আমি সহায়তা পেয়েছিলাম একজন উচ্চস্তরের
দেবতার কাছ থেকেই; কিন্তু কোন নামপ্রকাশ আমি করতে চাই না। এর জন্য প্রাপ্য শাস্তি মাথা
পেতে নিতে আমি প্রস্তুত।”
-“বেশ। আপনি
যখন কোন নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক, সেক্ষেত্রে আপনার আরও একটি দণ্ড প্রাপ্য। সেক্ষেত্রে
আমি আপনাকে-”
-“তার কোন দরকার
নেই!”
সকলেই সচমকে
ফিরে তাকালেন বক্তার দিকে। তিনি অবশ্য ততক্ষণে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের মাথার ওপর থেকে বিচারকের
শিরোভূষণটি খুলে সামনে রেখে হাঁটা লাগিয়েছেন মহর্ষি মার্কণ্ডেয়র দিকে। তাঁর কাছে পৌছে
তাঁর পাশেই অপরাধী-ব্যূহে দাঁড়িয়ে পড়লেন তিনি। পূর্ণদৃষ্টিতে তাকালেন সবার দিকে।
-“ভগবান বিষ্ণুদেব!
আপনি স্বয়ং?”- বিস্ময় মাখানো প্রশ্নটি এল ভগবান মহেশ্বরের কাছ থেকে। বাকি বিচারকরা,
এবং সেই ঘরে উপস্থিত সকলেই তখন নিশ্চুপ ঘটনার এই আকস্মিক পট-পরিবর্তনে। একমাত্র মহর্ষি
মার্কণ্ডেয় তখন দাঁড়িয়ে, লজ্জা-বিজড়িত মুখে।
-“কিন্তু আপনি
কেন?”- প্রশ্ন এল মহেশ্বরের কাছ থেকে – “আপনি তো সম্যক অবগত ‘সময়-সারণী’তে একটি ছোট্ট
পরিবর্তন কি প্রলয় ডেকে আনতে পারে সৃষ্টিতে! তা জেনেও আপনি এই কার্য করতে ভরসা পেলেন?”
-“‘সময়-সারণী’-তে
এরা যাতে কোন পরিবর্তন না আনতে পারে তার জন্যই এঁদের সুক্ষ্মদেহে ভবিষ্যতে পাঠানো হয়েছিল,
মহাদেব! এঁদের মূল কার্য ছিল পর্যবেক্ষণ, তাতেই এঁরা নিজেদের সীমাবদ্ধ রেখেছেন। তার
বাইরে এঁরা কিছু করেন নি। আর, মহর্ষি মার্কণ্ডেয়র যুক্তির সঙ্গে আমি একমত। যা লিখছি,
তার একটি চিত্ররূপ যদি চোখের সামনে ফুটে না ওঠে তবে তাকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে কি উপায়ে
ফুটিয়ে তোলা সম্ভব? এই যুক্তির সঙ্গে দ্বিমত হওয়ার কোন প্রশ্নই নে-”
বক্তব্যের মাঝপথেই
থেমে গেলেন ভগবান বিষ্ণুদেব, কারণ দেবরাজ ইন্দ্র তাঁর ডানহাতখানি তুলে সকলকেই থামতে
আদেশ করলেন। সকলে নিশ্চুপ হয়ে যাওয়ার পর অবশিষ্ট চারজন দেবতা নিজেদের মধ্যে চাপা গলায়
আবার কিসব আলাপ-আলোচনা সেরে নিলেন বেশ খানিক্ষণ ধরে। কিছুটা বাক্-বিতণ্ডা, কিছু তর্কাতর্কির
পর মনে হল কোন একটি বিষয়ে ওঁরা সহমত হলেন। অপরাধী-ব্যূহে প্রতীক্ষমান মহর্ষি মার্কণ্ডেয়
ও ভগবান বিষ্ণুদেব- দুজনেই প্রস্তুত হলেন সিদ্ধান্তের জন্য।
-“ভগবান শ্রীবিষ্ণুদেবের
বিষয়ে পরে আসছি, আগে আপনার বিচার হোক, মহর্ষি মার্কণ্ডেয়। সুক্ষ্ম হোক বা স্থূল- বিনা
অনুমতিতে কালভ্রমণ আইনতঃ দণ্ডনীয়। আর আপনার কৃত এই অপরাধ বর্তমানে প্রমাণিত। তাই আপনার
দণ্ডের বিষয়ে আমরা একটি স্থির সিদ্ধান্তে পৌছিয়েছি।
যেহেতু অপরাধের
গুরুত্ব এক্ষেত্রে হ্রস্ব ও এই অপরাধ সংগঠনের হেতুর পরোক্ষ উদ্দেশ্য দেবপ্রজাতির মঙ্গলসাধন,
সেক্ষেত্রে দণ্ডপ্রয়োগকালে আমরা অনেকটাই নমনীয় মনোভাব দেখিয়েছি বলেই আমাদের বিশ্বাস।
কিছুটা লঘু দণ্ড আপনি আশা করতেই পারেন, মহর্ষি মার্কণ্ডেয়। এখন আপনার দণ্ড মনযোগ দিয়ে
শুনুন।
বিধি অনুযায়ী,
অনথিভূক্ত কালভ্রমণের শাস্তি অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘কালচক্র’, যার অর্থ এককথায় অনন্তকাল
পার্থিব দুঃখভোগ। আপনার আত্মাকে বারংবার জন্ম নিতে হোত পৃথিবীতে, অনন্তকাল ধরে সংবাহিত
হত এই পার্থিব জন্ম। যেহেতু আপনি ভাল উদ্দেশ্যে এই বিধি লঙ্ঘণ করেছেন, তাই আমরা এই
পুনর্জন্মের মেয়াদ ঠিক করেছি… আশিবার। হ্যাঁ, আপনাকে আশিবার পৃথিবীতে পুনর্জন্ম নিতে
হবে বিভিন্ন প্রাণীর রূপ ধরে; যতক্ষণ না আপনি জন্ম নিচ্ছেন স্বরূপে ও স্বমহিমায়, আপনার
নিজের সময়ে, মনুষ্য অবতারে। অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হতে চলেছে আপনার এই মনুষ্যজন্ম।”
নীরবে দেবরাজ
ইন্দ্রের দিকে তাকিয়ে রায়দান শুনতে লাগলেন মহর্ষি মার্কণ্ডেয়। ইন্দ্রদেব অবশ্য নিজের
বক্তব্য থামান নি এক পলের জন্যও।
-“…আপনার জন্ম
সময়ের এক আশ্চর্য ভ্রান্তি, মহর্ষি মার্কণ্ডেয়! আপনার সৃষ্টিই হয়েছে যেন সময়ের নিয়মকে
ভাঙবার জন্য! আপনি যেন স্বয়ং সময়ের একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ; এমন এক পার্থিব যার কোন সঠিক
সৃষ্টিও নেই, ক্ষয়ও নেই, লয়ও নেই! আপনি স্বয়ং সময়, যার প্রকৃত অর্থে কোন বিনাশ নেই।
আপনার ওপর বিধাতার
এই আশীর্বাদকেই আমরা কাজে লাগাতে চাই, মহর্ষি মার্কণ্ডেয়। যে আশিটি জন্মের বিধান আপনাকে
দেওয়া হয়েছে তা নিছক এক দণ্ড, উদ্দেশ্যবিহীন এক দণ্ড, যা নির্ধারণ করা হয়েছে অপরাধের
মাপকাঠিতে বিচার করে মাত্র।
কিন্তু এখন যে
দণ্ডবিধি আপনার উপর ন্যস্ত করা হচ্ছে তা কিন্তু কোন সাধারণ দণ্ড হবে না; প্রত্যেকটিই
উদ্দেশ্যপূর্ণ, সমকালীন সমাজব্যবস্থার অঙ্গীভূত হয়ে আপনাকে থাকতে হবে মূলস্রোতে, সামাজিকদের
মাঝখানে। আর আপনার প্রতিটি জন্মেরই উদ্দেশ্য একটিই- দৈব স্বার্থরক্ষা! আপনি…বুঝেছেন?”
-“দৈব স্বার্থরক্ষা?
বিষয়টি ঠিক পরিষ্কার হল না প্রভু! আপনারা স্বয়ং তো আছেনই আপনাদের সৃষ্ট প্রজাতিগুলির
মাঝখানে, তাহলে আবার আমি কিসের স্বার্থরক্ষা-”
মৌন হয়ে গেলেন
প্রবল প্রতাপশালী দেবরাজ ইন্দ্র। বেশ কিছুক্ষণের জন্য ঘরের মধ্যে নেমে এল এক অস্বস্তিদায়ক
নীরবতা। পরিস্থিতি বিচার করে কিছুক্ষণ পর মুখ খুললেন প্রাজ্ঞ পরমপিতা ভগবান বেদান্ত-
বর্তমান জৈব গবেষণাগারের প্রধান আধিকারিক ও অন্যতম প্রধান বিচারপতি-
-“এই বিষয়ে যুবাপুরুষ
দেবরাজ ইন্দ্রদেবের মুখ খুলতে সংকোচ বোধ হচ্ছে মনে হয়, তাই আমিই প্রশ্নটির উত্তর বরং
দিয়ে দিই, মহর্ষি মার্কণ্ডেয়।
খুব সম্প্রতি
দেবতাদের কোন এক অধিবেশনে কিছু নতুন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তার মধ্যে অন্যতম- দেবতাদের
মিলিত সন্মতি সাপেক্ষে একটি নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে মানবপ্রজাতির ক্ষেত্রে অতীতের
ভুলের আর পুনরাবৃত্তি করা হবে না। একা থাকাই যখন মানবপ্রজাতির বিধান আমরা সেই বিধানকে
মেনে নিয়ে তাকে একলা পথ চলতে দেব। আমরা তাদের কর্মপদ্ধতি নিঃশব্দে পর্যবেক্ষণ করব অন্তরালে
থেকে; আমরা তাদের পথচলায় বিভিন্নভাবে সহায়তা করব ঐ অন্তরালে থেকেই, কিন্তু তাদের চোখে
আমরা হয়ে যাব অদৃশ্য। রক্ত-মাংসে গড়া দেবতার প্রতিচ্ছবি তারা আর কোনমতেই দেখতে পাবে
না, যেমনটি তাদের আগেকার প্রজন্ম দেখেছে।”
-“আপনারা- আপনারা
আমাদের পরিত্যাগ করবেন, প্রভু?”- কাতর স্বরে আর্তনাদ করে উঠলেন মহর্ষি মার্কণ্ডেয়।
-“’পরিত্যাগ’
কথাটি ঠিক নয়, মহর্ষি মার্কণ্ডেয়! শিশুর বেড়ে ওঠবার সময় দরকার হয় অভিভাবকদের। আমরা
অভিভাবকদের ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করব। কিন্তু অতীতে যেমন আমরা, অর্থাৎ দানব-মানব-রাক্ষস-গন্ধর্ব-দেবতা-
সকল প্রজাতি নির্বিশেষে এক হয়ে বসবাস করতাম একই ছাদের নীচে, এক্ষেত্রে আর তা করা হবে
না। একে একে আমাদের সৃষ্ট সকল বুদ্ধিমান প্রজাতি অপসারিত, অবলুপ্ত; মনুষ্যপ্রজাতি বাদ
দিয়ে। এর অন্যতম প্রধান কারণ, সৃষ্টির সঙ্গে নৈকট্য। এই নৈকট্য রাখা আর যাবে না। আমরা
আসব, আপনাদের পর্যবেক্ষণ করব, ফেরৎ চলে যাব, আবার আসব। কিন্তু কোন অবস্থাতেই আমরা প্রকাশ্যে
আসব না, আপনাদের চোখের সামনে। বিবর্তন এগিয়ে চলবে আমাদের সাহায্যে, অথবা কোন সাহায্য
ছাড়াই।”
-“কিন্তু কেন
প্রভু?”- পরমপিতা বেদান্তের কথা শেষ হওয়ার আগেই অধীর হয়ে প্রশ্ন করলেন মহর্ষি মার্কণ্ডেয়-
“আমাদের ওপর এই ক্রোধের কারণ কি? আমরা কি দোষ করলাম যে সহাবস্থান ছেড়ে আজ আপনারা পৃথক
হওয়ার কথা ভাবছেন?”
এই প্রশ্নের
উত্তর দিলেন দেবরাজ ইন্দ্র, তিনি সামলিয়ে উঠেছেন ততক্ষণে। তিনি বললেন-
-“যাকে চোখের
সামনে নিত্য দেখা যায়, যার দোষ-ত্রুটি সদা চোখের সামনে খোলা পাতার মত ধরা দেয়, তার
প্রতি আকর্ষণ চলে যায়। একত্রে থাকবার অর্থই হল পরষ্পরের সম্পর্কে বিশদ তথ্য জানা, মহর্ষি,
আর সেখান থেকেই শুরু হয় ক্ষমতার দ্বন্ধ! আরম্ভ হয় এক ‘মরণশীল ক্রীড়া’, আর তাকে জড়িয়ে
রাজনীতির পাশাখেলা। দুবার ঘটে যাওয়া বিদ্রোহ সেই ঘটনার দিকেই ইঙ্গিত করে।”
-“‘দুবার ঘটে
যাওয়া বিদ্রোহ’?”- মনে মনে চিন্তা করলেন মহর্ষি মার্কণ্ডেয় – “একবার তো বুঝলাম রাক্ষসরা,
তাহলে কি গন্ধর্বরাও-”
-“অনুমান করতে
যাওয়ার কোন কারণ নেই, মহর্ষি। আপনাকে সকল কথাই প্রথমবারের মতই তথ্য সমেত জানানো হবে
যাতে সঠিক জায়গায় ব্যক্ত করতে কোন অসুবিধা না হয়- আজ্ঞে হ্যাঁ। প্রথমবারের মতই আপনার
ঘাড়ে আরেকটি দায়িত্ব ন্যস্ত করা হবে, এই ধ্বংসের বাস্তবরূপ নির্মাণ করতে পারবেন সাহিত্যের
দ্বারা, এরকম কোন একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে খুঁজে বের করা এবং তাঁর সাহায্যে আরেকটি
উপাখ্যান রচনা করানো। এই কলঙ্কময় অতীত প্রথমবারের মতই, সকলের জানা উচিৎ, মহর্ষি!”
-“আপনাদের পরিকল্পনায়
আমার ভূমিকাটি ঠিক কি? এবিষয়ে প্রভু যদি একটু স্পষ্ট করে বলেন!”
-“বহুযুগ আগে
অজেয় গন্ধর্বসন্তান বীরভদ্র যে আশংকার কথা বলে গিয়েছিলেন কাহ্ণপ হত্যার ঠিক পরে পরেই,
তারই এক বাস্তব প্রতিরূপের পুনরাবৃত্তি হবে, মহর্ষি! মানবসভ্যতার সূর্যোদয়ে এক ভয়ংকর,
সর্বগ্রাসী যুদ্ধ হবে। প্রথমবারের নিরিখে এই যুদ্ধের গভীরতা আরও তীব্র কারণ এই যুদ্ধের
যুযুধান দুই পক্ষ কিন্তু দুইটি পৃথক জনগোষ্ঠীর প্রতিভূ নয়, বরং একই বংশের দুইটি পৃথক
শাখা! এর অর্থ, ভাইয়ে-ভাইয়ে যুদ্ধ! এরকম স্বঘাতী যুদ্ধের ইতিহাস যদি জনমানসে ছড়িয়ে
পড়ে তা হবে আরও মারাত্মক- স্বার্থের প্রয়োজনে ভ্রাতৃহত্যা আরও মারাত্মক আকার ধারণ করবে
অদূর ভবিষ্যতে! একে রোধ করতে গেলে উপায় একটিই- এই যুদ্ধের ইতিহাসকে সাহিত্যের মোড়কে
বেঁধে ফেলে কল্পনা হিসেবে মানুষের সামনে নিয়ে আসা, যার ঘটনাবলীর ভিত্তিপ্রস্তর হবে
রূঢ় বাস্তব। এই কারণেই প্রথমবারের মত, হে মহর্ষি, আপনাকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
তাই এই দায়িত্ব
আপনার ওপর ন্যস্ত হতে চলেছে, মহর্ষি! আপনাকে আমাদের প্রয়োজনে বেশ কয়েকবার জন্ম নিতে
হবে, মানবসভ্যতার বিভিন্ন সময়ে। না, এটি শাস্তির অঙ্গ নয়, তা আপনাকে আগেই বিধান করা
হয়ে গিয়েছে। এটি আমাদের একান্ত অনুরোধ। যেহেতু আমরা মানবদের একলা চলতে দিচ্ছি, তাই
পথভ্রষ্ট মানবদের মানবিকতার পথে ফিরিয়ে আনবার জন্য আমাদের দরকার আপনার মতই একজন পথপ্রদর্শক!
সেই দায়িত্বই আপনাকে দেওয়া হচ্ছে; আমাদের বার্তা আপনাকে জনসাধারণের কাছে নিয়ে যেতে
হবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিভিন্ন কালে। তবে এটাও আপনাকে জানিয়ে রাখতে চাইব মহর্ষি, মূর্খ
মানবদের কাছে আমাদের বার্তা বহন করে নিয়ে যাওয়ার পণ কিন্তু ভীষণ! হতে পারে, আপনার জীবন!!”
মহর্ষি মার্কণ্ডেয়র
চোখের সামনে ফুটে উঠল সেই দিগন্ত বিস্তৃত খোলা মাঠ, কাঁটার মুকুট মাথায় দেওয়া সেই যুগপুরুষ!
ক্ষণিকের জন্য শিউরে উঠলেন তিনি, কিন্তু কর্তব্য তাঁকে আত্মস্থ করে তুলল ক্ষণিকের মধ্যেই।
-“ঠিক কারণেই
কালভ্রমণ আইনতঃ দণ্ডনীয়, মহর্ষি মার্কণ্ডেয়। তা সে স্থূলদেহই হোক, বা সুক্ষ্মদেহে।
আপনি আপনার ভবিষ্যত সম্পূর্ণভাবে জানেন, তাই না?”
-“সম্পূর্ণ নয়,
আংশিক।”- মাথা নীচু করে উত্তর দিলেন মহর্ষি মার্কণ্ডেয়।
-“যাইহোক, আপনার
বিচারপর্বের শেষ অধ্যায়তে আসা যাক। মহর্ষি মার্কণ্ডেয়! আপনাকে ক্ষেত্রবিশেষে মনুষ্য
সভ্যতা ব্যতিরেকে অন্য উন্নত সভ্যতাগুলিতেও জন্মগ্রহণ করতে হবে; এবং তা দেবতাদের বিরোধী
শিবিরে। দেবতাদের পক্ষে নয়, এই সভ্যতাগুলিতে আপনার অবস্থান হবে দেবতাদের বিরুদ্ধে,
অস্ত্র হাতে!
আপনার হাতে উপায়
থাকবে ঘটনার গতিপ্রকৃতিকে একক ক্ষমতাবলে ঘুরিয়ে দেওয়ার; কিন্তু ভাগ্যের হাতে আপনি সদাই
পরাস্ত হবেন। আপনার কর্মকাণ্ডের, আপনার সিদ্ধান্তের মুখাপেক্ষী থাকবে অজস্র প্রাণ,
কিন্তু প্রতিবারই, আপনি থাকবেন ‘বিজিত নায়ক’। আপনার চিন্তাধারাকে স্মরণ করবে ভবিষ্যত
প্রজন্ম; যখনই কোথাও কোন ভালো কাজ করবে কেউ, লোকে স্মরণ করবে আপনার মরণশীল নামটিকে;
কিন্তু আপনি রয়ে যাবেন পরাস্তদের দলে। কোথাও গালি, কোথাও করতালি- বিভিন্ন সভ্যতায়,
বিভিন্ন স্থানে আপনার মরণশীল নামগুলি এইভাবেই বেঁচে থাকবে সমকালে, অথবা ভবিষ্যতকালে।”
-“আমি বুঝলাম
না প্রভু; আপনাদের বিরোধী শিবিরে জন্মগ্রহণই যদি আমি করি, তাহলে আপনাদের বার্তা… কি
করে…?”
-“বিরোধী শিবিরেও
স্বচ্ছ চিন্তাভাবনা করবার জন্য তো কাউকে চাই, যে যুক্তি দিয়ে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবে,
দূরদৃষ্টি প্রয়োগ করে, নাকি? যাইহোক এই হল মোটের ওপর আপনাকে ধার্য করা দণ্ডবিধি। কিন্তু
মনে রাখবেন, এতে দণ্ডের প্রভাব যত না বেশি, তার চেয়ে বেশি হল কর্তব্যবোধ। বিশেষতঃ আমাদের
অনুপস্থিতিতে মানবদের প্রতি আপনার কর্ম, প্রতিটি ক্ষেত্রে আলাদা মরণশীল নামে; আলাদা
পরিচয়ে, তা সে ভিন্ন কালের কোন পুরুষই হোন বা ভিন্ন সংস্কৃতির একজন সাধারণ রমণী, নেপথ্যে
থাকবেন একজন ব্যক্তিই- স্বয়ং আপনি! সত্যের জয় হোক!”
মাথা নীচু করে
করজোড়ে তাঁর দিকে ধেয়ে আসা প্রতিটি বাণ হজম করলেন মহর্ষি মার্কণ্ডেয়। এই কর্তব্যপালনে
তাঁর নির্বাচন তাঁকে অভিভূত করে তুলেছে। তিনি দেবরাজ ইন্দ্রের বক্তব্য শেষে আর কোন
কথা বলতে পারলেন না- ছোট্ট একটি প্রণাম ঠুকলেন তিনি, প্রথমে দেবরাজ ইন্দ্র ও অতঃপর
সভায় উপস্থিত প্রতিটি বিচারকদের প্রতি।
-“তবে আপনিও
কিন্তু অনাহত থাকবেন না, ভগবান শ্রীবিষ্ণু! কিছু দণ্ড কিন্তু আপনারও প্রাপ্য!”- মহর্ষি
মার্কণ্ডেয়র বিচারশেষে এবার দেবরাজ ইন্দ্রের মুখ ঘুরে গেল বিষ্ণুদেবের দিকে; তিনি তখনো
শান্ত ও অবিচলভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন অপরাধী-ব্যূহে। এখন নিজের নাম শ্রবণ করে মুখ তুলে
সোজা সামনের দিকে তাকালেন তিনি।
-“’কালাতীত’সংঘের
বিধিভঙ্গের অভিযোগে, আমি তার যোগ্য প্রাপক, দেবরাজ ইন্দ্রদেব। আপনার অমোঘ বিচার আমি
মাথা পেতে নিতে প্রস্তুত।”
-“মহর্ষি মার্কণ্ডেয়র
ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব তিনি সর্বক্ষেত্রে একাকী পালন করতে অপারগ। বিশেষতঃ মনুষ্যজন্মের
আগের সভ্যতাগুলিতে কোনপ্রকার সহায়তা ছাড়া উনি অসহায়, বিবশ হয়ে পড়বেন। আপনাকে বেশ কিছু
ক্ষেত্রে ওঁনার সঙ্গে বা ছাড়া, ওঁনাকে সহায়তা করতে হবে, ওঁনার আগমনের ক্ষেত্র প্রস্তুত
করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে। কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য আপনার জন্ম সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র্য কারণে,
ভিন্ন উদ্দেশ্যে হবে।”
-“আদেশ করুন,
দেবরাজ ইন্দ্র!”
-“বেশ। আপনি
‘কালাতীত’ সংঘের প্রাতিষ্ঠানিক সদস্য পদে আসীন থাকা অবস্থায় সংঘের বিধিলঙ্ঘণ করেছেন।
অপরদিকে, সম্পূর্ণ একক প্রচেষ্টায় এই কালজয়ী সংঘের প্রতিষ্ঠাতা আপনি; এর ভালো-মন্দের
প্রতি বিভিন্ন সময়ে আপনি যে অবদান রেখেছেন তার জন্য দেবকূল আপনার কাছে ঋণী। সমস্ত কিছু
মাথায় রেখে- আমরা আপনার জন্য একটি শাস্তিই বিধান করলাম। তা হল- আপনাকে এখন থেকে দশবার
পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করতে হবে। ‘অমর্ত্য’-র শিরোভূষণ পরিত্যাগ করে নেমে আসতে হবে মরণশীলদের
সঙ্গে একই সমতলে। বিচারশেষে আপনি আমার গোপন কক্ষে আমার সঙ্গে একান্তে সাক্ষাৎ করবেন;
আপনার ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব সম্পর্কে আপনার সঙ্গে আমার কিছু ব্যক্তিগত আলোচনা এই বেলাতেই
সেরে রাখা প্রয়োজন। আপনি এখন বিদায় নিতে পারেন, শ্রীবিষ্ণূ! আশা করি পৃথিবীতে জন্মগ্রহণের
প্রক্রিয়া সম্পর্কে আপনাকে নতুন করে অবহিত করবার কোন প্রয়োজন নেই?”
-“না। ধন্যবাদ,
দেবরাজ ইন্দ্র। ধন্যবাদ আপনাদের সকলকে। এখন, অনুমতি দিন।”
বাকি বিচারকদের
প্রত্যেককে নমস্কার করে বিচারকক্ষ থেকে নিষ্ক্রান্ত হলেন ভগবান শ্রীবিষ্ণুদেব। তিনিও
বর্তমানে অভিযুক্ত এবং দণ্ডপ্রাপ্ত; বিচারালয়ে থাকবার অধিকার বর্তমানে তাঁর নেই।
-“আর আপনি, মহর্ষি
মার্কণ্ডেয়! দণ্ডের প্রথম ভাগ সম্পাদন করবার সময় এসে গিয়েছে। প্রস্তুত হয়ে নিন। আমরা
আপনার দেহ থেকে এখন আপনার আত্মাকে বিমুক্ত করব। প্রাণহীন অবস্থায় আপনার দেহ থাকবে আমাদের
কাছে; হিমাঙ্কের বহুগুণ নীচের তাপমাত্রায়, রাসায়নিকে ডুবিয়ে সংরক্ষণ করা থাকবে আপনার
দেহ। আর আপনার বিদেহী আত্মার প্রথম গন্তব্য হবে রাক্ষস সমাজে। অসুরদের বিরুদ্ধে এই
লড়াইয়ের সূত্রপাত ঘটবে ঐ সমাজ থেকেই-”
-“প্রভু! রাক্ষস
সমাজে? কোথায়…?”- একটি ক্ষীণ সন্দেহ উঁকি দিল মহর্ষি মার্কণ্ডেয়র মনে। তবে কি- ?
-“অতিরিক্ত জ্ঞান
অনেক জটিলতার সৃষ্টি করে, মহর্ষি মার্কণ্ডেয়। আপনি আপনার জন্ম গ্রহণ করুন ও কর্মভোগ
করে আসুন। একটি কথা বলে নেওয়া আবশ্যিক, মহর্ষি। শরীর ধারণপূর্বক আপনি যখন পৃথিবীতে
বিচরণ করবেন তখন আপনার বর্তমান শরীর সম্পর্কিত স্মৃতিই কেবল আপনার মনে কাজ করবে। শরীর
ধারণকালে অপরাপর কোন স্মৃতিই আপনার মনে থাকবে না। যখন আপনি, মানে আপনার বিদেহী আত্মা
আবার সশরীরে প্রবেশ করবে তখন আপনাকে হয়তো আংশিক বা পুরো কার্যক্রম জানানো হতে পারে
প্রয়োজনবোধে, কিন্তু এ ব্যাপারে আপনি কিছু নিজে থেকে জানতে চাইবেন না। এবং, যা জানবেন,
তা গোপনীয় রাখবেন। আপনি সন্মত?”
-“যথা আজ্ঞা, দেবরাজ!”- মাথা নত করে আভূমি একটি প্রণাম করলেন মহর্ষি মার্কণ্ডেয়।
-“বেশ। এখন থেকে প্রতিবার আপনার পুনর্জন্ম হোক নতুন স্মৃতির সরণী বেয়ে! প্রহরী! এঁকে সময়-প্রক্ষেপক গৃহে নিয়ে যাও। আপনার যাত্রা শুভ হোক, মহর্ষি মার্কণ্ডেয়।”
[চলবে...]
RELEVANT LINKS:
আমার এই ছোট প্রয়াসটি কেমন লাগছে আপনাদের? জানাতে দ্বিধা করবেন না। আপনারা আমার সম্পর্কে আরও জানতে পারেন নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে:
আপনারা আমার পাঠ করা গল্প শুনতে পারেন আমার ইউটিউব চ্যানেলে
আপনারা সরাসরি ট্যুইট করতে পারেন আমায়
নতুন খবরগুলি সম্পর্কে আপডেট পেতে পারেন আমার পেজে
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আমাদের ব্লগগুলি আপনাদের কেমন লাগছে? অবশ্যই জানান আমাদের-