On the new, upcoming Bengali Historical, Science fiction story 'Duranta Ghurni- MahaShongborter Majhkhane'- A few words from the author Aritra Das
On the new, Upcoming Story of 'Duranta Ghurni- MahaShongborter Majhkhaane' on Pratilipi - প্রতিলিপিতে পরবর্ত্তী উপন্যাস 'দুরন্ত ঘূর্ণি- মহাসংবর্ত্তের মাঝখানে' প্রসঙ্গে আমার কিছু কথা
- Straight from the author, Aritra Das
Aritra Das, the Bengali Author on 'Duranta Ghurni- MahaShongborter Majhkhane' |
‘লেজেণ্ড’ এবং ‘লেগ্যাসি’ সমগ্রের গল্পগুলি যখন লেখা শুরু করি তখন প্রথম যুগে মনে হয়েছিল- আর বাড়াব না, গন্ধর্বদের অবসানের সাথে সাথে এই উপাখ্যান শেষ করব। কিন্তু…অবধারিতভাবে নিজের কাছে নিজেই হেরে গেলাম! স্বাভাবিক নিয়মেই একটি প্রশ্ন উঠে এসেছিল মাথায়- ‘যা শুরু করলাম, তা কি সত্যিই শেষ করলাম, নাকি গল্পের বেশিরভাগ অংশই অকথিত রয়ে গেল?’
এই প্রশ্নটিই কিন্তু যেকোন কথকের, যেকোন সাহিত্যিকের কাছে
একটি ‘ক্যাচলাইন’; যা বলতে চেয়েছি তা কি সম্পূর্ণ হল, নাকি কিছু বাকি রয়ে গেল? এই পোকা
যতক্ষণ নড়বে মাথার ভিতর ততক্ষণ হাতের ব্যাট পাঁইপাঁই করে দৌড়বে, বল নানান দিশায় ব্যতিব্যস্ত
করে রাখবে ফিল্ডারদের। পোকা নড়া বন্ধ হলেই সব শেষ; ‘তামাম সুদ’ বলে কম্বল বগলে নিয়ে
টঙের ঘরে উঠে পড়বার প্রকৃষ্ট সময় সেটি!
Read the story 'Mahakaaler Majhe- Part9' here
না। পারলাম না দেবতাদের নিয়ে এই গল্পমালা শেষ করতে। বরঞ্চ
নিজের মনের ভিতর অনুসন্ধিৎসা ব্যাপারটি যেন আরও বেড়ে গেল! এ বিষয়ে পৃথিবীতে মানুষদের
ওপর এলিয়েনদের প্রভাব সম্পর্কে জনপ্রিয় এক গবেষকের একটি মূল্যবান উক্তি মনে পড়ে গেল-
‘তাঁরা (অপার্থিব দেবতারা) হাজার হাজার বছর আগে পৃথিবীতে এসে নিজের উপস্থিতির প্রমাণ
পিছনে রেখে চলে গেলেন, তারপর জাম্পকাট করে ফেরৎ এলেন ১৯৪৭ সালে রসওয়েল রাঞ্চে- এমন
চিন্তা মাথাতে আনাও সঠিক নয়!’ সত্যিই তো! প্রি-নিয়াণ্ডারথালদের যুগে বা নিয়াণ্ডারথালদের
সময় গন্ধর্বগোষ্ঠী দাপিয়ে রাজত্ব করে গেলেন পৃথিবীর বুকে, হয়তো বা আমাদের পুরাণ বা
মহাকাব্যের প্রেক্ষাপট তৈরি করে রেখে গেলেন (বিশ্বের সমস্ত পুরাণ বা মহাকাব্যের কথা
বলা হচ্ছে!), তারপর তারা নিজেদের মধ্যে লড়াই করে সরে গেলেন প্রেক্ষাপট থেকে দেবাসুরের
বিষম বিবাদের মাঝে পড়ে, আর…মানুষ ‘বুদ্ধিমান’ হয়ে উঠল দেবতাদের (বা অসুরদের) কোন সাহায্য
ছাড়াই! নাহ্! বিষয়টি ঠিক খাপ খাচ্ছে না যে!
আসুন, জাপানের একটি পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ‘নিহোঙ্গী’র দিকে
তাকাই। সাতশ খৃীষ্টাব্দে লেখা এই গ্রন্থটিতে সৃষ্টিতত্ত্ব ব্যাখ্যা রয়েছে, ‘জাপান’
নামক দেশটি কিভাবে জন্মলাভ করে সমুদ্রের বুক থেকে সে সম্পর্কে লেখা আছে, প্রথম ‘তেন্নো’
বা সম্রাটের কথা এবং রাজবংশ স্থাপনের কথা উল্লেখ আছে। এই গ্রন্থে পৃথিবীর বিকাশ সম্পর্কে
লেখা একটি তত্ত্ব-
-‘সৃষ্টির গোড়ায় পৃথিবী-সূর্য-চাঁদ-অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্র
– কিচ্ছু ছিল না, ছিল কেবল একটি অণ্ড। বিশাল সেই অণ্ড একদিন নিজের দেহের ভার সহ্য করতে
না পেরে ফেটে গেল! ওপরের হালকা অংশগুলি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গেল আকাশের অন্ধকারে বিভিন্ন দিকে;
নীচের ভারি অংশটা সময় লাগল জমাট বেঁধে মাটি তৈরি করতে। এটিই আমাদের পৃথিবী!’- (এরিক
ফন্ দানিকেনের লেখা ‘প্রমাণ’ গ্রন্থ থেকে) ।
আচ্ছা, বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং সাহেবের সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে
প্রস্তাবিত ‘বিগব্যাং থিয়োরি’ এই বিষয়ে কি বলে? সাতশ খৃীষ্টাব্দে উদীয়মান সূর্যের দেশ
থেকে ভেসে আসা এই তত্ত্ব কি কোনভাবে-
Read the Article on 'MahaKaaler Majhe- Part12' here...
প্রাচীন বিশ্ব অতীব রহস্যময়! এই যেমন ধরা যাক- কৃষ্ণদেশ
আফ্রিকার বুকে কোন সহস্রাব্দপ্রাচীন এক তথাকথিত ‘অ-সভ্য’ উপজাতির প্রাণসৃষ্টির রহস্য
ব্যাখ্যার মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠা অন্য এক কাহিনী-
-“…মহান ঐ দেবতা লুকিয়ে ছিলেন আকাশের অন্ধকারতম কোণে,
তাকে ঘিরে ছিল ভূতপ্রেত ও দত্যি-দানোরা…অবশেষে রাত কেটে দিন হল, তিনি সৃষ্টি করলেন
প্রাণ-”
মানেটা কি কিছুটা পরিষ্কার হল? ‘মহান দেবতা লুকিয়ে ছিলেন
আকাশের অন্ধকারতম কোণে’- জায়গাটি মহাকাশ হতে পারে, পরিমণ্ডলের বাইরে সেটির সম্পূর্ণটাই
অন্ধকার, কোন আলোর চিহ্নমাত্র নেই সেখানে…‘তাঁকে ঘিরে ছিল ভূতপ্রেত ও দত্যি-দানো’-
বিষয়টি রূপক কারণ এই উপাখ্যানের নির্মাতাদের জ্ঞানের অভাব তাদের বাধ্য করেছিল অতিপ্রাকৃতের
আশ্রয় নিতে…‘অবশেষে রাত কেটে দিন হল, তিনি সৃষ্টি করলেন প্রাণ’- পৃথিবীর পরিমণ্ডলে
প্রবেশ করে অন্ধকার কেটে গেল, আলোর মুখ দেখলেন তিনি, সৃষ্টি হল বহুবিধ, বৈচিত্র্যময়
প্রাণ (হিং টিং ছট যাদুমন্ত্রে নিশ্চই নয়, চোখে না দেখা কোন জিন ম্যানিপুলেশান প্রোগ্রাম?
হতেও পারে)!
এই আফ্রিকারই অপর এক আদিমতম প্রজাতি উবুন্টু (অথবা উবান্টু)
। এদের প্রাণসৃষ্টির ব্যাখ্যাটি দীর্ঘদিন উপেক্ষিত ছিল। এদের লোকগাঁথা অনুযায়ী প্রাণসৃষ্টির
আগে পৃথিবীতে কোন স্থল ছিল না, চতুর্দিকে খালি জল আর মাঝেমধ্যে কাদাভূমি! এদের উপাস্য
যে সর্বময় দেবতা, ব্যাপারস্যাপার দেখে মহা চটলেন তিনি; শেষে থাকতে না পেরে বমি করে
বসলেন! এই বমির মধ্য থেকেই প্রথমে এল মাছ, তারপর অন্যান্য সকল প্রাণী ও উদ্ভিদগোষ্ঠী।
প্রাণসৃষ্টির পদ্ধতিটি বমনদায়ক বটে, কিন্তু সাতকাণ্ড রামায়ণের পর ব্যাপারটি কি দাঁড়াল
বলুন তো?
এই বিষয়টি দীর্ঘদিন একপাশে ফেলে রাখা হয়েছিল, কিন্তু ১৯৫৬
সালে যখন প্রথম একটি কাঁচের রিসর্টে ‘আদি স্যূপ’ নির্মাণ করা সম্ভব হল, তখন ঐ প্রাচীন
‘অসভ্য’ রূপকটির মর্মার্থ বেরিয়ে এল সকলের চোখের সামনে! প্রথম প্রাণসৃষ্টি ব্যাপারটিও
করে ফেলা হয়তো সম্ভব হত, যদি ‘ইলেকট্রিক বম্বার্ডমেন্ট’-এর সঠিক ভোল্টেজটি নিরূপণ করা
যেত! পৃথিবীর প্রথম দশায় প্রাণসৃষ্টির সময় যে বাজগুলি আছড়ে এসে পড়ছিল পৃথিবীর বুকে,
তার মাত্রা নিরুপণ করা এখন তো আর সম্ভব নয়!
দেবতাদের রহস্যেভরা উৎপত্তির খোঁজ করতে গেলে, তাঁদের গতিবিধির
খোঁজ রাখতে গেলে চোখ রাখতে হবে কিন্তু প্রাচীন উপাদানগুলিতেই। মনে রাখা প্রয়োজন- ‘যন্ত্রী
বিনা যন্ত্র বাজে না’!
Read the story of 'Kaaljayi Meluha- Mrittyunjayi Soubhtatrittya' Complete story
এই বিষয়গুলি এতটাই তর্কসাপেক্ষ এবং বৃহৎ আলোচনার জায়গা
যে তার জন্য হয়তো প্রয়োজন প্রলম্বিত একটি সুস্থ বিতর্ক। এ কথা মাথায় রাখা প্রয়োজন-
প্রাচীন পৃথিবীর সব রহস্যগুলি কিন্তু এখনও উম্মোচিত হয় নি; বহু অজানা তথ্যের বা প্রমাণের
একটি বড় অংশ রয়ে গিয়েছে মাটির নীচে, কিছু আমরা পুড়িয়ে নষ্ট করে দিয়েছি বিভিন্ন সময়ে,
বিভিন্ন যুগে, আর বেশিরভাগ আমরা পাঠোদ্ধারই করে উঠতে পারি নি! পুরোন হিব্রু বাইবেলে
‘বুক অফ্ এনখ্’ যা বলতে চেয়েছেন, তা কি আমরা হুবহু বুঝেছি?
রাম সমগ্রের ‘লেজেণ্ড’ ও ‘লেগ্যাসি’ লেখাটি বরং তুলনামূলকভাবে
সহজ ছিল; ‘যারা আমাদের আগে পৃথিবীতে এসেছিলেন’, তাদের সম্পর্কে লিখতে গিয়ে যদি তাদের
ঘাড়ে কল্পবিজ্ঞানের কচকচানি চাপিয়ে দেওয়া যায় তবে বিষয়টি খুব বেমানান লাগে না; এর সঙ্গে
প্রয়োজন ছিল ‘কল্পনাকে ছাপিয়ে কল্পনা’ এবং কিছুটা দর্শন- মোটের ওপর শেষমেষ ব্যাপারটি
উতরিয়ে দিতে পেরেছি বলে মনে হয়। কিন্তু গণ্ডগোলটি বাঁধল ‘লেগ্যাসি’র পরবর্ত্তী পর্যায়,
অর্থাৎ মানবপর্যায়ে ঢুকে গিয়ে! এখানে কিন্তু কিছু হার্ডকোর ঐতিহাসিক তথ্য দিতেই হবে!
আমাদের সুবোদ্ধা (সুবক্তাও বটে!) জনতার ‘ভাজা বাদাম’ আকন্ঠ খেতে খেতে ‘চম্পা সোনা’
আবৃত্তিটিকে পঞ্চাশবার রিওয়াইণ্ড করে শুনতে কোন আপত্তি নেই, কিন্তু পুরাণের মধ্যে প্রযুক্তির
খোঁজ করলেই সাথে সাথে যেভাবে কয়েকজন ‘গেল গেল’ রব করে চেঁচিয়ে ওঠেন তাতে মনে হয়- আমাদের
‘অজানাকে জানবার আগ্রহ’-মশাইও না এবারে লজ্জা পেয়ে মাটির নীচে সেঁধিয়ে যান! ‘মহেঞ্ছোদারো’
নিয়ে নির্মিত একটি সিনেমার পরিচালক কোন একটি দৃশ্যে ঘোড়া দেখিয়েছিলেন, তার দূর্দশা,
আবার রাজস্থানের জহর ব্রত নিয়ে নির্মিত অপর একটি সিনেমার পরিচালকের ক্ষয়ক্ষতি- এই যুগে
চিন্তাধারা যে সংকুচিত হয়ে আসছে তা বিলক্ষণ প্রমাণিত! বিদেশীদের ‘এক্সপেরিমেন্ট’ দেখতে
আপত্তি নেই, দানিকেন থিয়োরির ওপর ভিত্তি করে তৈরি সুপার সব রঙচঙে পোশাক পরা নায়কদের
মারকাটারি দেখতে আপত্তি নেই, ড্রাগনের পিঠে চেপে বিশ ফুট লম্বা দানবদের সঙ্গে মারামারি
পয়সা খরচ করে দেখতে আপত্তি নেই, ভারতবর্ষের বুকে উত্তরপ্রদেশীয় ব্রাহ্মণের গল্পে ৩২০০
খৃীষ্টপূর্বাব্দের ‘আর্য সভ্যতার’ গল্প পড়ে মেনে নিতেও আপত্তি নেই, কিন্তু ডালভাত খাওয়া
কোন বাঙালি যদি ইতিহাস মেনে এরকম কিছু লিখে ফেলে তাহলে তার জন্য বরাদ্দ- ঔদাসীন্য?
পাঠকরা ক্ষমা করবেন- ‘ছুটন্ত প্রেমের উড়ন্ত গল্প’, ‘কুমারী কুকুরের বৈধব্যযন্ত্রণা’
বা ‘রাতপাখীর কাতর ব্যথা’-মার্কা গল্প সত্যিই লিখতে পারব না; আমার গল্পের চরিত্রগুলি
অনেকটা আমারই মতন কাঠখোট্টা আর একবগ্গা, বড্ড বেশি ‘লিনিয়ার’! এদের দ্বারা আর যাই হোক
না কেন, ‘অবাধ্য প্রেম মানে না শেম’-এর গল্পের নায়ক হওয়া সম্ভব নয়!!
‘লেগ্যাসি’ সমগ্রের পরবর্ত্তী সিক্যুয়েল ‘কালজয়ী মেলুহা’
সমগ্রের শেষ পর্বটিতে (নবজাগরণ) দেখেছি যে বালানের গল্প শেষ হচ্ছে দেবতাদের মহাকাশযানের
ভিতরে গিয়ে, যেখানে মহর্ষি মার্কণ্ডেয় তার কথা শুনবেন বলে সময়ের দুস্তর বাধা অতিক্রম
করে এসেছেন তার কাছে। এখানেই মোটামুটি বালানের উপাখ্যান শেষ! এই সমগ্রটিতে একটি পার্শ্বচরিত্র
নিয়ে একটি উপাখ্যানও আছে- ‘মহাসিন্ধুর পথে’। এই উপাখ্যানের নায়ক মৈলানা, তাকে দিয়েই
এই পার্শ্বগল্পটির শুরু ও শেষ। এই গল্পটির প্রয়োজন ছিল। কুয়েনজাদারোর (যা পরবর্ত্তীতে
পরিচিতি পাবে ‘মহেঞ্জোদারো’ নামে) কথা আদ্যোপান্ত লিখলাম, হরপ্পার বিনাশ কেমনভাবে হল
লিখব না? এই কথা ভেবেই গল্পটি লেখা।
এতেও খুব একটা সমস্যা হয় নি; মূলধারার ইতিহাসকে অক্ষত
রেখে কল্পনার হাত ধরে এগিয়ে যেতে হয়েছিল সামনে। আমরা ইণ্ডাস ভ্যালি সিভিলাইজেশনের নদ-নদীগুলি
সম্পর্কে জানি, তাদের ঘিরে যে সমাজব্যবস্থা তৈরি হয়েছিল সে সম্পর্কে জানি, তাদের কৃষ্টি,
তাদের সংস্কৃতি, তাদের ইরিগেশন বা মিউনিসিপ্যাল ব্যবস্থা, তাদের নগর সভ্যতা সম্পর্কে
জানি; কিন্তু-
And, then comes the concluding part of 'Kaaljayi Meluha- NabaJagaran'...
আমরা জানি না সত্যিই কোন এলাঙ্গ-বালান-ঔণীক-মৈলানা-নালামী-চানু-থোরাসান-আজিলান
সম্পর্কে, অর্থাৎ, কোন ব্যক্তিবিশেষ বা বিশেষ ব্যক্তি সম্পর্কে জানা যায় না কিছুই!
জানা যাবে কি করে? ঐ সভ্যতার লিপিগুলি কিন্তু অপঠিত। এইভাবে দৃশ্যমান হয়েও অদৃশ্য যে
সভ্যতা, সেখানে কল্পনার জাল বোনা তো তুলনামূলকভাবে সহজ কাজই, নয় কি?
এইবারে কিন্তু অল্পে নিষ্কৃতি নেই, কারণ দেবতারা এবারে এসে পড়েছেন ‘লেগ্যাসি সিক্যুয়েল’-এর পরবর্ত্তী দশায়- মৌর্যদের যুগে! আড়াল থেকে তাঁরা নজরে রাখছেন পার্থিবদের কার্যকলাপ- সদাজাগ্রত অভিভাবকদের মতই! উল্টোদিকে দেখলে এই যুগটি কিন্তু অতটা অপরিচিত নয় আমাদের কাছে! কাজেই- কোন ধাপ্পাবাজী নয়, কোন শর্টকাট নয়; গা পুড়িয়ে তথ্য যোগাড় করে লিখতে হবে, নাহলে-
‘দুরন্ত ঘূর্ণি- মহাসংবর্ত্তের মাঝখানে’ উপন্যাসটি লিখতে বসে প্রথম যে নায়কের নাম মাথায় উঠল অবধারিতভাবে- চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য! তিনি এবং তার গুরুদেব চাণক্য- ইতিহাসের পাতায় বেশ উল্লেখযোগ্য একটি জুটি বটে! তাঁদের ঘিরে তৈরি হওয়া হাজার ‘মিথ’, বিতর্ক, রোমান্টিসিজম, ভালো লাগা- স্বাভাবিকভাবেই এঁদের নিয়ে গল্পটি লিখতে পারলে এটি একটি অন্যরকম অভিজ্ঞতা হত এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু…
Chandragupta Maurya |
ঠিক এখান থেকেই শুরু হল সমস্যা! সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠল-
ইতিহাস সংরক্ষণের বিষয়ে আমাদের প্রবল অনীহার দিকটি…সেই প্রাচীনকাল থেকেই যে রোগের বিস্তার!
‘পরিশিষ্টপার্বণ’ অনুযায়ী মৌর্য্যবংশের যে পরিচিতি, তা বৌদ্ধদের সঙ্গে মেলে না, সমসাময়িক
রাজবংশগুলির ক্রনোলজিতেও বেশ কিছু ফারাক; তাহলে কি করণীয়? একটি বিষয় ভেবে দেখবার ছিল;
‘দীপবংশ’ বৌদ্ধদের পালিত্ ভাষায় লেখা তৃতীয় বা চতুর্থ শতকের গ্রন্থ, অপরদিকে ‘পরিশিষ্টপার্বণ’
জৈনদের, বলা ভালো আচার্য্য হেমচন্দ্রের লেখা কাব্যটি অনেক পরের, তাই হিসেব অনুযায়ী
দীপবংশকে রেফারেন্স হিসেবে ধরাই যেত, কিন্তু আরও একটি ব্যাপার ভেবে দেখবার মত! সম্রাট
অশোক নিজে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত, আবার চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্য দীক্ষিত হয়েছিলেন জৈন ধর্মে।
তাহলে এই ফারাক বা অসঙ্গতিটি এরকমভাবে থেকে যাবে কেন? এটা কি কোন ইচ্ছাকৃতভাবে তৈরি
করা কনফিউশন, নাকি যুগধর্ম- জেনারেশান গ্যাপ? ইতিহাস কিন্তু এই বিষয়ে নীরব, ইচ্ছাকৃতভাবে
একটা স্থায়ী কনফিউশন তৈরি করে বেড়ার ওধারে দাঁড়িয়ে যেন সে মজা দেখতে ব্যস্ত! কিসের
কারণে এই প্রাচীন ঐতিহাসিকদের তৈরি করা পরষ্পরবিরোধী কথাগুলি?
Chanakya |
কনফিউশন্ তো শুধু এক জায়গাতেই নয়, অনেকগুলি ক্ষেত্রে! সেই যখন খাতা বগলে করে স্কুলে যেতাম তখন শুনেছি- নাগবংশ ও নন্দবংশ বলতে ‘টোনাটুনির সংসার’- বাপ-ছেলের যৌথ রাজত্ব, ব্যাস! কিন্তু এই বিষয়ে পরে লিখতে বসে জানলাম- নাগেরা মোট নয়জন রাজা, আর নন্দেরা আট- হারাধনের ছেলেপিলের সংখ্যা খরগোশদের মত বেড়ে গেল কি করে? আবার দেখুন- পদ্মনাপিত শেষ রাজার গলা কেটে সিংহাসনে জাঁকিয়ে বসলেন- এই থিয়োরি অনুযায়ী দাঁড়ায় নন্দবংশ একটি শুদ্রবংশ। কিন্তু কোথাও তাদের ক্ষত্রিয়বংশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, কারণ- শেষ নাগবংশীয় রাজন মহাপদ্মনন্দীনের অবৈধ পুত্র হলেন পদ্ম নাপিত, এই হিসেব ধরে তো এঁনার বংশটিও তো ক্ষত্রিয়ই দাঁড়াচ্ছে, নাকি?
Read the complete story of 'Amriter Mrittyu'- A science fiction novel on zombies
মৌর্য্যদের ক্ষেত্রেও এই সংঘর্ষ কিন্তু অব্যাহত! তার কারণ-
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যের পিতৃপরিচয়! আমার ব্যক্তিগত ধারণা যে কোন জনপ্রিয় টক শো-এর শেষ রাউণ্ডে পরিচালন
কমিটি যদি যোগ্য প্রার্থীর টাকা-পয়সা মারতে চান তবে স্বচ্ছন্দে এই প্রশ্নটি রাখতেই
পারেন- ‘চন্দ্রগুপ্তের পিতার নাম কি? অপশন্ এ- সর্বার্থসিদ্ধি। অপশন্ বি- ধনানন্দ।
অপশন্ সি- মহাপদ্মনন্দ (আজ্ঞে হ্যাঁ, এই অপশনটিও আছে!)। অপশন্ ডি- জনৈক ময়ূর শিকারী
ও প্রতিপালক!’ যে উত্তরই দিন না কেন, মাথায় ‘চাঁটিয়াৎ চাঁটিয়াতাম্’ পড়তে বাধ্য!!
পড়ুন 'দ্যা লেগ্যাসি অফ্ রাম উপন্যাস-সমগ্রের পাঁচটি স্মরণীয় মুহুর্ত্ত' সম্পর্কে লেখকের নিজস্ব মতামত এখানে
অবশেষে একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম- না, চন্দ্রগুপ্তকে দিয়ে
নায়ক খাটানো যাবে না, এটা অনেকটা আগুন নিয়ে খেলা হয়ে যাচ্ছে! তাহলে কে? এমন কেউ, যিনি
হবেন চন্দ্রগুপ্তের ‘অল্টারড ইমেজ’, কিন্তু নৃশংস নন, যার মধ্যে রাজনৈতিক উচ্চাশার
থেকেও বড় হবে মনুষ্যত্ব। তাছাড়া- ‘লেগ্যাসি’র মানবশাখার ফর্মূলা (যা এর আগে আমরা দেখেছি
‘কালজয়ী মেলুহা’ সমগ্রে) ধরে তাঁকে ‘দেবাংশী’ হতে হবে যে! মৌর্য্যরা ‘দেবানাম পিয়’
হোন তাতে আপত্তি নেই, কিন্তু আমার গল্পের চরিত্রটিকে তো আদি রাজা বীরভদ্রের অংশ হতেই
হবে, এটাই তো ‘লেজেণ্ড’ ও ‘লেগ্যাসি’ সমগ্রের মূল থিম! এই সব বিষয় মাথায় রেখেই জন্ম
নিলেন দৈবিক, দেবতাদের অসমাপ্ত কর্মপ্রণালী এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, নতুন, কিন্তু অদৃশ্য,
সমান্তরাল একটি না-বলা ইতিহাস রচনার জন্য!
দৈবিককে কেন চন্দ্রগুপ্তের ‘অল্টারড ইমেজ’ বললাম, তা নাহয় আপনাদের বিচারের ওপরেই ছেড়ে রাখলাম, কি বলেন আপনারা? আপাতত 'লেগ্যাসি অফ্ রাম' সমগ্রের শেষ খণ্ডটি আপলোডিং চলছে; এটি শেষ হলেই খুব শীঘ্রই গল্পটিকে আনব। অবশ্যই পড়ে দেখবেন- 'দুরন্ত ঘূর্ণি- মহাসংবর্ত্তের মাঝখানে'। আমার বিশ্বাস- গল্পটি নিশ্চই আপনাদের মন জয় করবে।
======================================================================
এই বিষয়ে আমার ভিডিওটি দেখতে পারেন আপনারা:
To get Latest news and updates related to my stories, you may Like and Follow our page
You may twit us anytime!
You may have a view on my works on Pratilipi
Will be meeting you in our next article, till then, bye!!
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আমাদের ব্লগগুলি আপনাদের কেমন লাগছে? অবশ্যই জানান আমাদের-