What is the story-plot of the series? A Summery from the Writer's End of the Series of The Legacy of Ram- A Bengali science fiction action-adventure and Suspense novel by Aritra Das, the Author
দ্যা লেগ্যাসি অফ্ রাম- নিঃসঙ্গ যাত্রার সূচনা
- গল্পের প্লট ও এই প্রসঙ্গে কিছু কথা আপনাদের সাথে
- © অরিত্র দাস
Discussing the plot of The Legacy of Ram by Aritra Das |
এর আগের ব্লগটিতে আলোচনা করা হয়েছিল মূলতঃ ‘লেগ্যাসি’ সমগ্রটির চরিত্রগুলির নামকরণ নিয়ে বিশদে। এই ব্লগে আমি গল্পটির প্লট নিয়ে দু-চার কথা আলোচনা করব; তবে আলোচনা যত দীর্ঘই হোক না কেন, যা বলব তার থেকে বাকি থেকে যাবে অনেক বেশি! এতটা দীর্ঘ, জটিল, বিভিন্ন তত্ত্ব ও প্রাচীন সভ্যতাগুলিকে ছুঁয়ে যাওয়া ঘটনাবহুল উপন্যাস এই ‘লেগ্যাসি’ পর্বটি যে একে একটি সীমিত ক্ষেত্রে বেঁধে রাখা খুবই কষ্টসাধ্য কাজ!
এই
প্রসঙ্গে প্রথমেই যে কথাটি স্বীকার করে নেওয়া ভাল তা হল- আমি মহাকাব্যের একটি অন্ধ
অনুকরণ গড়ে তুলতে চাই নি!
এই
ছোট্ট কথাটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রসঙ্গক্রমে অনেকগুলি কথা চলে আসে মনে, কিন্তু সেই
সব কথার পুরোটা এই একটি ব্লগের মধ্যে লিখে ফেলা সম্ভব নয় (যেমনটা প্রথমেই উল্লেখ করেছি),
তাই আমি যা লিখব, তা হবে আমার সেই চিন্তাধারার একটি নির্যাস মাত্র, পুরো বিষয়টি কিন্তু
নয়।
আরও
একটি কথা বলে রাখা প্রয়োজন, ‘লেজেণ্ড’ বা ‘লেগ্যাসি’- কোনটিই কিন্তু কোন তত্ত্বকথা
শেখানো বা প্রচার করবার প্রচেষ্টা নয়, পাঠকদের চিন্তাভাবনা তাদের নিজস্বই থাক, এই কামনাই
করি। আমি শুধু চেয়েছিলাম বহু-আলোচিত ‘দানিকেন থিয়োরি’র আলোকে আমাদের মহাকাব্যগুলিকে
(এবং বিশ্বের সমস্ত পুরাণ, লোকগাঁথা ও মহাকাব্যগুলিকে) ফিরে দেখা, রূপকের অন্তরালে
কতটা দর্শন ও বিজ্ঞান লুকিয়ে তা খুঁটিয়ে বের করার চেষ্টা করা, এবং অবশ্যই সেই ভিনগ্রহীদের
অস্তিত্বের সন্ধান যাদের ‘দেবতা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এই নিয়ে নাড়া-ঘাঁটা চলল সুদীর্ঘ
একটি সময় ধরে, এর তালে তাল মিলিয়ে যে খণ্ডচিত্রগুলি উঠে এল আমার মানসপটে, শুধু সেই
কল্পনাটুকুই আমি লিপিবদ্ধ করেছি আমার গল্পে। এ কথা অনস্বীকার্য- মূল মহাকাব্যগুলির
সাথে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোন মিল নেই গল্পের বিষয়বস্তুর; এটি সম্পূর্ণভাবেই একটি মৌলিক
গল্প, যা কিছুটা হয়তো মহাকাব্যের আলোকে আলোকিত।
‘লেগ্যাসি
অফ্ রাম’ গল্পটির সব থেকে বড় গুণ এই যে এই উপন্যাসের, বা বলা ভাল এই সমগ্রটির নায়ক
কিন্তু পাঁচ ভাইয়ের একজনও নন, এখানে নায়ক একজন অশীতিপর বৃদ্ধ- মহর্ষি ব্যাসদেব স্বয়ং!
‘লেগ্যাসি’ সমগ্রের পূর্বসূরী ‘লেজেণ্ড’ সমগ্রে যা দেখানো হয়েছিল-
কোন
একটি সুদূর ছায়াপথে অবস্থিত দেবতাদের আপন বাসভূমি অসুররা হঠাৎ আক্রমণ করে বসে বিপর্যস্ত
করে তোলে সবকিছু; ধ্বংস হয়ে যায় দেবতাদের আপন বাসভূমি, তার আপন জীববৈচিত্র্য বুকে চেপে
ধরে! কিন্তু কিছু দেবতা প্রাণে বেঁচে যান, বিধাতার অসীম অনুগ্রহে, প্রাণভয়ে পালিয়ে আসেন
এই দেবতারা তাঁদের বিশ্ব থেকে অনেক, অনেক দূরে, সম্পূর্ণ অনাবিষ্কৃত একটি ছায়াপথের
বার-পরিধির দিকে সরে থাকা একটি অজানা সৌরসংসারে…পৃথিবীতে। এই সৌরমণ্ডল ও অপর আরও একটি
সৌরমণ্ডলে দেবতারা সৃষ্টি করেন তাঁদের নতুন উপনিবেশ; নিজেদের ভবিষ্যৎকে অসুরদের হাত
থেকে সুরক্ষিত রাখতে কতকটা আত্মরক্ষার তাগিদেই সৃষ্টি করেন নতুন এক বাস্তুতন্ত্র- উন্নততর
প্রাণ। এই উন্নত জীবগোষ্ঠীর কিছু তাঁদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়, সেই প্রাণীগুলিকে
প্রজাতিগতভাবে সরিয়ে ফেলা হয়। কিছু বিদ্রোহ ঘোষণা করে সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে, ফলে তাদেরও
প্রজাতিগতভাবে অবলুপ্ত করতে হয়। এদিকে দেবতাদের খোঁজ করতে করতে তাঁদের চিরশত্রু অসুররা
পৃথিবীর দ্বারপ্রান্তে চলে এলে শুরু হয় এক নতুন ধরণের ছায়াযুদ্ধ, দেবতা ও অসুরদের মধ্যে!
‘লেজেণ্ড’ সমগ্রের সবকটি খণ্ডের সমাপ্তির পর দেখা যাবে এর করুণ পরিণতি- রাক্ষস প্রজাতির
সামগ্রিক বিলুপ্তিকরণ!
'দ্যা লেজেণ্ড অফ্ রাম' উপন্যাসসমগ্র প্রসঙ্গে লেখকের কিছু কথা- অবশ্যই পড়ে দেখুন সমগ্রটি সম্পর্কে লেখকের বক্তব্য
ঠিক
যেখানে শেষ হয় ‘লেজেণ্ড’ সমগ্রটি, সেখান থেকেই কিন্তু শুরু হয় ‘লেগ্যাসি’। খাতায়-কলমে
দুটি সময়ের মধ্যে অবশ্য ব্যবধান বিস্তর; ‘লেগ্যাসি’ সমগ্রে গন্ধর্বরা অবশ্য অনেক বেশি
আধুনিক, তারা নিজেরাই আন্তর্গ্রহ যাত্রা ও বহির্বিশ্ব উপনিবেশ রক্ষণে সক্ষম, মহাকাশ তাদের কাছে একেবারে
অধরা নয়, কিন্তু…বিষয়গত দিক দিয়ে এই মন্তব্যটি করাই যায়!
চালু
বাংলায় একটি বহুল প্রচলিত বাণী রয়েছে- “যে-ই যায় লঙ্কায়, সে-ই হন রাবণ”! এর আক্ষরিক
অর্থ- “যাকে ঘৃণাভরে দূরে ঠেলে তুমি সিংহাসনে এলে, একদিন তুমিও তার মতই ঘৃণার পাত্র
হয়ে যাবে”! এই ব্যাপারটিই বিস্তার লাভ করে ‘লেগ্যাসি’ সমগ্রে। যে রাক্ষসরা ধার করা
প্রযুক্তির বলে বলীয়ান হয়ে উঠে একদিন মাথাচাড়া দিয়ে উঠে দেবতাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে
ব্রতী হন দলে দলে, তাদের অবলুপ্তির পর ধীরে ধীরে সেই জায়গাটিই দখল করে বসেন গন্ধর্বরা;
উন্নত প্রযুক্তির উদ্দামতায় তারা অস্বীকার করে বসেন দেবতাদের অস্তিত্বকে! দেবতাদের
বিরুদ্ধাচরণ করা, প্রকৃতির বিরুদ্ধাচরণ করা, এমন কি স্বজাতিরও বিরোধিতা করে বসেন আত্মকেন্দ্রীক
গন্ধর্বরা- শান্তির শাশ্বত বাণী বেমালুম ভুলে গিয়ে! ক্ষমতা আর সিংহাসনের লোভ, অন্যের
ওপর বলপূর্বক অধিকারকরণের উদগ্র বাসনা তাদের ঠেলে দিয়েছিল পারষ্পরিক হানাহানির মধ্য
দিয়ে অনির্বার্য এক ধ্বংসের আবহে; এতে পরোক্ষ ইন্ধন ছিল অসুরদের। মহাদেব দুর্জ্জয়ের
সাথে গন্ধর্ব যুবরাজ অজাতশত্রুর একটি কথোপকথনের মধ্যেই ধরা পড়ে এই বক্তব্যের সারমর্ম-
-“…অসুরদের যোজনার যেটুকুনি অংশ পরিষ্কার হয়েছে
আমাদের কাছে, ওদের সামগ্রিক যোজনাটি ত্রিধারায় বিভক্ত। প্রথম ধারাটি হল- আমাদের সহায়ক
শক্তি, অর্থাৎ গন্ধর্বরা, তাদের মধ্যে জমে থাকা অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে ভাইয়ে-ভাইয়ে
যুদ্ধ লাগিয়ে দেওয়া, যাতে আপনারা নিজেদের মধ্যে বিবাদ-বিসম্বাদে ব্যস্ত থাকেন। দ্বিতীয়ত-
কৃত্রিম পদ্ধতিতে পৃথিবীর জলবায়ুগত পরিবর্তন ঘটানো। এর ফলে স্বাভাবিক নিয়মেই উষ্ণতর
আবহাওয়ায় আপনারা ধীরে ধীরে অবলুপ্ত হয়ে যাবেন। শেষত- এই সময়কালে আমাদের, অর্থাৎ দেবতাদের
নিজস্ব গ্রহে, আমাদের নিজেদের বাসভূমিতে আমাদের কোণঠাসা করে রাখা যাতে এই সকল দুস্কার্যে
কোনপ্রকার বাধা না দিতে পারি। যোজনার এই শেষ ধারার জন্যই আমরা প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হচ্ছি
আমাদের নিজেদের গ্রহ ‘বরাবতী’তে…”
‘দ্যা লেগ্যাসি অফ্
রাম- চতুর্থ খণ্ড: বিসর্জ্জনের বাদ্য’ থেকে
ঊৎকেন্দ্রীক
মানসিকতার স্বাভাবিক পরিণতিই ধরা পড়েছে ‘লেগ্যাসি’ সমগ্রে- গন্ধর্বযুগের অবসান! কিন্তু…কিভাবে?
গল্পটির
প্রতিটি খণ্ডের মধ্য দিয়ে গেল সুস্পষ্টভাবে, রন্ধ্রে রন্ধ্রে ধরা পড়বে গন্ধর্বদের এই
আত্মকেন্দ্রীক, বিলাসী, স্বার্থপরতার এই ভয়াবহ চালচিত্রটি, আর এর সঙ্গেই যোগ হবে গল্পের
নায়কের, অর্থাৎ মহর্ষি ব্যাসদেবের নিজস্ব গল্পের ধারাটি। প্রথম থেকে শেষ খণ্ড অবধি
গন্ধর্বদের পতনের দিকটি ছাড়াও যে ধারাটিকে এখানে তুলে ধরা হয়েছে সেটি সম্পর্কে বরং
কিছু বলা যাক-
মানবসভ্যতার
ধারায় মহর্ষি ব্যাসদেবের গল্প তুলে আনতে গিয়ে বিরাট একটি কল্পনা ফাঁদতে হয়েছে, এর কারণ-
তথ্যের অপ্রতুলতা! মূল মহাকাব্য থেকে এই প্রতিভাধর মানুষটি সম্পর্কে যতটুকুনি জানা
যায় তার পুরোটিই ব্যবহার করা হয়েছে, কিন্তু তার বাইরে না জানার যে সুবিশাল বিস্তৃতি,
সেটা? এই না-জানার বিস্তার যে অনেক বেশি! আর এখানেই তো প্রয়োজন কল্পনা, যাতে বাস্তবিক
চরিত্রটিও সম্পৃক্ত থাকবে। সাহিত্যের এই পর্যায়টি ‘এক্সপেরিমেন্ট’, ‘যদি এমনটি হত’-মার্কা
গোছের কিছু, আর এরকম এক্সপেরিমেন্ট-এর মাত্রাটি বিদেশী সাহিত্যগুলিতে অত্যন্ত বেশি।
বাইরের দেশগুলির টিভি সিরিজগুলিতে, ইন্টারনেট সিরিজগুলিতে, বা সিনেমা বা কন্টেন্ট-নির্ভর
কোন শো-তে, বা কোন গল্পে যদি বাস্তবিক কোন চরিত্র এসে উঁকিঝুকি মারে, বা মূল গল্পের
গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলিতে যদি অজস্র কাল্পনিক ঘটনার মধ্য দিয়ে সেই বাস্তবিক চরিত্র বা
চরিত্রগুলিকে যেতে হয়, তবে সেই একই ‘এক্সপেরিমেন্ট’ আমাদের দেশে করা সম্ভব হবে না কেন?
জানা বিষয়গুলি মোটামুটি অক্ষুণ্ণ থাকলেই তো হল!
'দ্যা লেগ্যাসি অফ্ রাম' উপন্যাস-সমগ্রটিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন চরিত্রগুলির নামকরণ প্রসঙ্গে কিছু কথা- অবশ্যই পড়ে দেখুন
‘সূর্য’
সাম্রাজ্যের অধীশ্বর মহারাজ কুরু (এর আগের ব্লগে নামকরণের বিষয়টি খোলসা করেছি, সমস্যা
হলে এখানে একবার দেখতে পারেন) তাঁর সাম্রাজ্যে ঘটে যাওয়া ভয়াবহতম যুদ্ধের পর সস্ত্রীক
রাজ্য পরিত্যাগ করে বাণপ্রস্থে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন; তাঁর এই বনবাসের সহযাত্রী হন
মহর্ষি ব্যাসদেব। শতায়ূপ মুনির আশ্রমের নিকটবর্ত্তী জঙ্গলে থাকবার সময় এক রাত্রে তাঁদের
সকলের ওপর একটি আক্রমণ হয়; এই আক্রমণের সংবাদে মহর্ষি মার্কণ্ডেয় গণপতিদেবের সাথে এসে
মহর্ষি ব্যাসদেবের সাথে দেখা করেন এবং তাঁদের সহযোগিতা করবার মনষ্কামনায় তাঁদের সাথে
থাকতে রাজি হন। একই দিন রাত্রিকালে দ্বিতীয় একটি আক্রমণ সংঘটিত হয় যার তীব্রতা আগের
দিন রাত্রিবেলার আক্রমণের থেকে অনেক বেশি ছিল…আক্রমণকারীরা সংখ্যায় অনেক বেশি এবং মহর্ষি
ব্যাসদেবের সঙ্গীসাথীরা এক এক করে প্রাণ হারাচ্ছিলেন টানা, সংঘবদ্ধ এই আক্রমণের মুখে
পড়ে! অবস্থা বেগতিক বুঝে অবশেষে মহর্ষি মার্কণ্ডেয় ও গণপতিদেব- দুজনে মিলিত সিদ্ধান্ত
নেন মহর্ষি ব্যাসদেবকে নিয়ে দ্রুত জঙ্গল পরিত্যাগের! সঙ্গী অনুচররা সকলেই মারা পড়ছিলেন,
যারা বেঁচে ছিলেন মহর্ষি মার্কণ্ডেয়র নির্দেশে তারা দ্রুত অকুস্থল ছেড়ে চলে যান এবং-
সস্ত্রীক মহারাজ কুরু মারা যান এই আকষ্মিক আক্রমণের লহরের মুখে পড়ে! সময় নষ্ট না করে
দেবতা গণপতিদেব ও মহর্ষি মার্কণ্ডেয় দ্রুত জঙ্গলত্যাগ করেন অচেতন মহর্ষি ব্যাসদেবকে
সাথে নিয়ে, দাবানলের আগুনে ভষ্মীভূত জঙ্গলকে পিছনে ফেলে রেখে। এখানেই শেষ হয় ‘লেগ্যাসি’
সিরিজের প্রথম পর্ব- ‘আদি পর্ব’।
-“আপনাদের বিলম্ব দেখে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ইনি
দৌড়ে প্রবেশ করতে গিয়েছিলেন কুটিরের ভিতর; সেইসময় প্রবেশদ্বারের তোরণটি ভেঙে পড়ে এর
মাথায়। না, চিন্তার কোন কারণ নেই, এঁর আঘাত অতটা গুরুতর নয়, আমি পরীক্ষা করে দেখেছি।
বর্তমানে ঘটনার আকষ্মিকতায় উনি অচেতন হয়ে আছেন। ভয়ের কিছু নেই, মহর্ষি।”
-“আর সেবা-বন্ধুরা?”
-“ওঁরা পালিয়েছেন; এবার আমাদেরও পালাতে হবে!
বাকি আর কেউ আসবেন না বলছেন? অবশ্য… কুটিরের যা অবস্থা তাতে ওঁদের আর জীবিত
থাকবার কোন সম্ভাবনাই নেই।”
- ‘দ্যা লেগ্যাসি অফ্
রাম: প্রলগ (আদি পর্ব)’
Click here to read the complete Part1 of The Legacy of Ram on Pratilipi |
শতায়ূপ
মুনির আশ্রম থেকে বেরিয়ে গণপতিদেব ও মহর্ষি মার্কণ্ডেয় আর কোন দ্বিধাই করেন নি, আহত
মহর্ষি ব্যাসদেবকে সাথে নিয়ে তাঁরা সোজা চলে আসেন কৃষ্ণদেশের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত
দেবতাদের একটি গোপন কার্যালয়ে, দেবতাদের কঠোর সুরক্ষার ঘেরাটোপে। সকলে এসে পৌঁছন বালি-পাথরের
দেশ ‘মিশ্র’ প্রদেশে। নতুন দেশের ভিন্ন হাওয়ায় দ্রুত আরোগ্য লাভ করেন মহর্ষি ব্যাসদেব;
অবাক হয়ে যান তিনি এই নতুন দেশটিকে দেখে, তার সৃষ্টি, তার কৃষ্টি, তার সংস্কৃতি ও লোকগাঁথাগুলি
সম্পর্কে ক্রমশঃ জানতে পেরে! এই সূত্রে একদিন তিনি মহর্ষি মার্কণ্ডেয়কে উদ্দেশ করে
বলেন-
-“কিন্তু একটি বিষয় এখনও ঠিক পরিষ্কার হল না
মহর্ষি মার্কণ্ডেয়”- অদূরে ভোজনরত কুমীরের
পালটির দিকে নির্লিপ্ত চোখে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বলে উঠলেন মহর্ষি ব্যাসদেব- “এইখানে
যে সময়টুকু রয়েছি তাতে আমার বারংবার মনে হচ্ছে কেন যে এখানকার বেশ কিছু রীতি-নীতির
সঙ্গে অবিকল সাদৃশ্য রয়েছে আমাদের স্বদেশের বেশ কিছু রীতির?”
-“যেমন?”- তাঁর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন মহর্ষি
মার্কণ্ডেয়।
-“যেমন- প্রকৃতি উপাসনা। এই প্রদেশ- কি যেন নাম
বলেছিলেন…’মিশ্র’ প্রদেশ- এখানকার অধিবাসীরা
যেমন সূর্যদেবের উপাসনা করেন, তেমনি সূর্যদেবের পূজোর চল আমাদের দেশেও রয়েছে। এরা মূর্তিপুজোয়
খুব একটা বিশ্বাসী নন; মূর্তি এদের কাছে একটি আভিধানিক উপাচার মাত্র, যেমন দেবতাদের
তিন-ভবনের মাঝখানের সবচেয়ে দীর্ঘ ভবনটির চূড়োয় বসানো ঐ মূর্তিটি- ওর তো কোন পূজো হতে
দেখি নি কোনদিন; এর থেকেই আমার এইরূপ স্বতঃসিদ্ধান্ত। যাইহোক, যা বলতে চাইছি তা হল,
স্বদেশেও তো মূর্তিপূজোর তেমন প্রচলন নেই। তাছাড়া…”
-“তাছাড়া?”
একটু ইতস্তত করে পুনরায় বলে উঠলেন মহর্ষি ব্যাসদেব-
-“তাছাড়া মৃত্যু ও শরীরের পুনর্জন্ম তত্ত্বে
একটু আঞ্চলিক প্রভাব থাকলেও মূল তত্ত্বটি কিন্তু মোটের ওপর একই- আত্মার শরীরকে ছেড়ে
যাওয়া এবং পুনরায় অন্য কোন রূপে তার ফেরৎ আসা। এই বিশ্বাস তো যুগের পর যুগ ধরে আমাদের
দেশে চলে এসেছে; স্বয়ং মহর্ষি বাল্মীকির অমর কাব্যে ধ্বণিত হয়েছে এই বিশ্বাস! এখানেই
আমার মনে একটা প্রশ্ন জাগছে, এরা আমাদের কোন সুদূর আত্মীয় নয় তো?”
- “দ্যা লেগ্যাসি অফ্
রাম- দ্বিতীয় খণ্ড: সৌভ্রাতৃত্বের সূচনা”
পড়ুন 'দ্যা লেগ্যাসি অফ্ রাম উপন্যাস-সমগ্রের পাঁচটি স্মরণীয় মুহুর্ত্ত' সম্পর্কে লেখকের নিজস্ব মতামত এখানে
এই
‘মিশ্র’ প্রদেশের প্রতিটি বালির কণা, প্রতিটি পাথরের খাঁজের পরতে পরতে লুকিয়ে অভূতপূর্ব,
খাপছাড়া, উদ্ভট কত না-শোনা জনশ্রুতি! এই জনশ্রুতিগুলির মধ্যে লুকিয়ে কি কোন অজানা দর্শন,
না কি অজানা অতীতে ফেলে আসা কোন ইতিহাস, যার সময় নিরূপণ করা মানবদের পক্ষে অসম্ভব?
“…এখানকার নাগরিকদের একটি বিচিত্র অভ্যাস আছে
যা প্রথমেই উল্লেখ করতে হয়। এদের বিশ্বাস- মানুষের অস্তিত্ব তিনটি ধারায় বিভক্ত। প্রথমটি
হল, অবশ্যই তার শরীর। দ্বিতীয়টি হল তার চেতনা, যা স্বাভাবিক সকল অনুভূতি ও আবেগের নিয়ন্ত্রক।
আর তৃতীয়টি হল- ব্যক্তিত্ব; যা মহর্ষি মার্কণ্ডেয় ও মহর্ষি ব্যাসদেবের মধ্যে এক সুস্পষ্ট
সীমারেখা টানে। এদের বিশ্বাস- মানুষের যখন মৃত্যু হয় তখন চেতনা ও ব্যক্তিত্ব দেহ থেকে
বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং কল্পলোকের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়; পিছনে পড়ে থাকে তার অসাড়, নশ্বর
দেহ। কিন্তু যাত্রা শেষে দুজনেই আবার হাত ধরাধরি করে ফেরৎ আসে আর খুঁজে ফেরে তাদের
ফেলে যাওয়া নশ্বর শরীর! যে কারণে এরা মৃত ব্যক্তির দেহ আর্যদের মত পোড়ায়ও না, আবার
সহস্রাব্দ-প্রাচীন অনার্যদের মত মাটিতে পুঁতেও ফেলে না। এরা সেই মৃত শরীরটিকে সংরক্ষণ
করে। আর, এর সামগ্রিক প্রক্রিয়াটিও বেশ অদ্ভুত!...”
- “দ্যা লেগ্যাসি অফ্
রাম- দ্বিতীয় খণ্ড: সৌভ্রাতৃত্বের সূচনা”
পুরো
প্রদেশটি জুড়ে ঘুরে দেখে নতুনভাবে অনেককিছুই জানতে পারছেন মহর্ষি ব্যাসদেব, অবারিত
হচ্ছে তাঁর মনের বন্ধ দ্বার! তাঁর যাত্রার সাথে সাথে এগিয়ে চলেছে গল্প, মসৃন গতিতে।
অসুররাও কিন্তু ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়, এই গুপ্ত আশ্রয়টিতেও এবারে নজর পড়ে তাদের। আক্রমণ
হয়, আর এই আক্রমণের মুখে পড়ে দ্রুত স্থানত্যাগের সময় হঠাৎ জানা যায়, অসুরদের আক্রমণের
লক্ষ্য আর কেউ নন- স্বয়ং মহর্ষি ব্যাসদেব! এই সত্য দিয়েই শেষ হয় ‘দ্যা লেগ্যাসি অফ্
রাম’ সমগ্রটির দ্বিতীয় খণ্ড।
Click here to read Part2 of the series on Pratilipi |
তৃতীয় খণ্ডে গল্পের গতিকে মহর্ষি ব্যাসদেবকে অসুরদের চোখ এড়িয়ে নিয়ে আসা হয় পৃথিবীর বুকে ‘নতুন বিশ্ব’ বলে পরিচিত সম্পূর্ণ অজানা এক নতুন ভূখণ্ডে, ‘শার্দূলের দরজা’ বলে পরিচিত দেবতাদের অপর একটি গুপ্ত আশ্রয়স্থলে। বাইরের সভ্যতার সঙ্গে সকলপ্রকার সম্পর্কবিরহিত, লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা পৃথিবীর বুকে আস্ত একটি মহাদেশ, যার কোন সংবাদ বার-দুনিয়ায় এসে পড়ে নি! এরকম একটি স্থানে গভীর জঙ্গলের একেবারে মাঝখানে দেবতাদের গুপ্ত এই আশ্রয়ে এসে নতুন মানুষজন, তাদের আচার-আচরণ-কৃষ্টি ও সংস্কৃতি দেখে মুগ্ধ হয়ে যান মহর্ষি ব্যাসদেব; জঙ্গলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যও মুগ্ধ করে তাঁকে, অনাবিল আনন্দে বাচ্চাদের মত আব্দার জোড়েন তিনি জঙ্গলের চারদিকটা একবার ঘুরে দেখার জন্য। কিন্তু বাদ সাধেন মহর্ষি মার্কণ্ডেয় স্বয়ং-
-“কি সবুজ, সতেজ, ঘন এই অরণ্য! আচ্ছা মহর্ষি
মার্কণ্ডেয়, আমরা জঙ্গল-দর্শনে কবে যাব?”
সবুজ, সুবিস্তৃত অরণ্য দেখে বাচ্চা ছেলেদের মত
আবদার করে উঠেছিলেন অশীতিপর বৃদ্ধ। তবে মহর্ষি মার্কণ্ডেয়র উত্তর তাঁর প্রবল উৎসাহের
গোড়ায় প্রথমেই জল ঢেলে দেয়-
-“এই ঘন জঙ্গলের মধ্যে পায়ে হেঁটে মহর্ষি ব্যাস?
কখনোই নয়!”
একটু বাদেই অবশ্য মহর্ষি মার্কণ্ডেয় অনুভব করেন
এই নতুন ভূমিতে সদ্য আগত একজন প্রাজ্ঞ অতিথিকে এভাবে মুখের ওপর প্রথমেই সরাসরি ‘না’ বলে দেওয়াটা তাঁর উচিৎ
হয় নি। এর পরেই কারণটি তিনি খুলেও বলেন-
- ‘দ্যা লেগ্যাসি অফ্
রাম – তৃতীয় খণ্ড: দ্যা থ্রোনস্ কল (সিংহাসনের
আহ্বাণ)’
‘মিশ্র’
প্রদেশে থাকাকালীন অসুরদের আক্রমণের লক্ষ্য যে মহর্ষি ব্যাসদেব স্বয়ং, এ তথ্য বিষ্মিত
করে তুলেছিল গণপতিদেব ও মহর্ষি মার্কণ্ডেয়- দুজনকেই। অসুরদের পক্ষ থেকে এ কিরকম যোজনা,
আপাতদৃষ্টিতে যার কোন মাথামুণ্ডুই বোঝা যাচ্ছে না? কৌতুহলি হয়ে মহর্ষি ব্যাসদেবের ওপর
একটি শারীরিক পরীক্ষা চালানো হয়, ফলপ্রকাশে উঠে আসে চিত্তাকর্ষক, আকর্ষণীয় এক তথ্য!
বিশদে কিছু বুঝে ওঠবার আগেই আরও একবার নেমে আসে অসুরদের আক্রমণ; আরও একবার ‘শার্দূলের
দরজা’ নামে খ্যাত দেবতাদের লুকোন আশ্রয় ছেড়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হন দেবতারা, কিন্তু
এবারে তাঁদের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে অসুরদের পরিকল্পনা, মহর্ষি ব্যাসদেবকে নিয়ে তাদের
নতুন যোজনা।
এই
পর্বেই প্রথম উঠে আসবে দেবতাদের এক সুযোগ্য প্রতিপক্ষের নাম- ভগবন্ বীরাকোচা! দেবতারা
জানতে পারবেন কোন শত্রুর সাথে যুদ্ধে নামতে হচ্ছে তাঁদের-
-“বিরাট খোলা প্রাঙ্গণটির মাঝখানে একটি বিরাট
পুরুষমূর্তি; জৈমিনীকে জিজ্ঞেস করে জানা গেল ওটি স্থানীয় লোকেদের উপাষ্য এক দেবমূর্তি।
এর আগে একবার দুবার কথাপ্রসঙ্গে এই দেবতার নাম শুনেছিলেন তিনি; কি যেন…বীর…বীরে…না, নামটা এখন ঠিক মনে
আসছে না তাঁর। আসলে স্থানিক ভাষাটি এত দূর্বোধ্য ও কঠিন যে মনে থাকতে চায় না কিছুতেই।
যাইহোক, জনশ্রুতি অনুযায়ী এই ভূখণ্ডে একদিন এসে উপস্থিত হন এই দৈবপুরুষটি; তাঁর মনোনীত
একদল মানবদের সঙ্গে নিয়ে। এই ভূমিতে তিনি স্থাপনা করেন মনুষ্যবসতি, নির্মাণ করেন বেশ
কিছু প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদ। একটা ব্যাপার এখানে বলে রাখা ভালো, মহর্ষি ব্যাসদেবের
স্বভূমিতে দেবতারা যেমন উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ, এই দেবতাটি কিন্তু তেমনটি নন; এঁনার গাত্রবর্ণ
সম্পূর্ণ সাদা, চৌকোনো দাড়ি, বড় বড়, টানা টানা চোখ, হাতের কবজিতে গোল আকৃতির একটি অদ্ভুত
বাজুবন্ধ, কোমরে বন্ধনী, হাতে কমণ্ডলু জাতীয় একটা কিছু ধরে আছেন তিনি। দীর্ঘ, ঋজু তাঁর
শরীর। কথিত জনশ্রুতি, তাঁর গবেষণা শেষে এখানকার কার্য সেরে তিনি চলে যান; কিন্তু তিনি
মানবদের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান একদিন আবার ফেরৎ আসবার। সেই থেকে এখানকার অধিবাসীরা
তাঁর ফেরৎ আসবার অপেক্ষায় দিন গুনছেন, কিন্তু তিনি ফেরৎ আর আসেন নি…”
- ‘দ্যা লেগ্যাসি অফ্
রাম – তৃতীয় খণ্ড: দ্যা থ্রোনস্ কল (সিংহাসনের
আহ্বাণ)’
Click here to read Part3, the complete story on Pratilipi |
চতুর্থ খণ্ডে শুরু হচ্ছে ‘খেলা ভাঙার খেলা’! মহর্ষি ব্যাসদেব কি কারণে অসুরদের লক্ষ্যবস্তু, তা বুঝে ফেলে দেবতারা এখন চাইছেন তাঁকে স্বদেশে ফিরিয়ে এনে নিজ বাসগৃহে রেখে আপাদমস্তক নিশ্ছিদ্র একটি নিরাপত্তার চাদরে তাঁকে ঢেকে রাখতে, এই কারণে ডুবো-জলযানে করে মহর্ষি ব্যাসদেবকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে স্বগৃহে। মূলতঃ এটিই সেই পর্ব যেখানে দুই প্রাজ্ঞ মহর্ষির মধ্যে দীর্ঘ সময়ব্যাপী আলোচনা হয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে; তা সে গন্ধর্ব যুগের পাঁচ ভাইয়ের যুদ্ধে জড়ানোর পিছনে কারণই হোক, বা ‘সূর্য’ বংশের শ্রেষ্ঠতম সন্তানদের নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে প্রাণ হারানোর বিভিন্ন ঘটনাক্রমই হোক। এই পর্বেই জলের নীচ দিয়ে যাত্রার সময় বিভিন্ন অজানা দৃশ্যের সম্মুখীন হয়ে ধীরে ধীরে ফুটে উঠবেন দার্শনিক ব্যাসদেব। এই পর্বের গল্পটি মূলত স্মৃতিমূলক।
‘পোকা’ বা ‘কীট’ বললে একটি গা-ঘিনঘিনে
প্রজাতির কথা ডাঙার দেশের লোকেদের মাথায় আসে; কিন্তু সেই পোকা যখন চিত্র-বিচিত্র, বহুবর্ণ
যুক্ত, রঙবাহারি হয়? আর তারা যদি অনেকে একসাথে, যোজন লম্বা স্থান অধিকার করে বসে থাকে
দঙ্গল বেঁধে? এরকমই এক অদ্ভুত পোকার প্রজাতি দেখতে পেয়েছিলেন মহর্ষি ব্যাসদেব; সমুদ্রের
নীচে বালুকাময় পথের ওপর লাল-সাদা একটি বাহারি চাদর কেউ বিছিয়ে দিয়েছে যেন! হাঁ করে
মৃত্যুপুরীতে সেই অদ্ভুত রঙের খেলা দেখতে দেখতে শিশুর মত বায়না করে ওঠেন মহর্ষি ব্যাসদেব-
-“মহর্ষি মার্কণ্ডেয়! একটিবার থামান আমাদের এই
জলযানটিকে!”
-“সে কি, কেন?”
-“আমি ঐ বর্ণময় প্রজাতিগুলিকে একবার কাছ থেকে
দেখতে চাই, স্পর্শ করতে চাই ওদের!”
হেসে ফেললেন মহর্ষি মার্কণ্ডেয়, অশীতিপর বৃদ্ধের
শিশুসুলভ আচরণ দেখে। তারপর বললেন-
-“আপনার অনাবিল আনন্দ দেখে আমি অত্যন্ত প্রীত
বোধ করছি মহর্ষি ব্যাস; এতটাই যে আপনাকে নিরাশ করতে আমি দুঃখ অনুভব করছি। যাই হোক,
যদি বা ওর কাছাকাছি যাওয়াটা আপনার পক্ষে সম্ভব হয়, তাও বলছি- ওখান থেকে একটি কীটকেও
আপনি হাতে করে অন্যত্র নিয়ে যেতে পারবেন না-”
-“এ কথা কেন বলছেন, মহর্ষি মার্কণ্ডেয়?”
-“প্রথম বাধা- এই গভীরতায় জলের প্রচণ্ড চাপ!
আপনি হয়তো বলবেন ওরা বেঁচে আছে কি করে, কিন্তু ভুলে যাবেন না ওরা এখানকার সন্তান; আমরা
বহিরাগত! তাও তা উপেক্ষা করে আপনি যদি ওদের কাছে জীবিত পৌঁছতে পারেন তাহলেও আপনি ওদের
স্পর্শ করতে চাইবেন না-”
- ‘দ্যা লেগ্যাসি অফ্
রাম – চতুর্থ খণ্ড: রোড টু অ্যাপোকেলিপ্স (বিসর্জ্জনের বাদ্য)’
মহাপ্রস্থানের
পথে যাওয়ার প্রস্তুতি একদিনে হয় না, দীর্ঘদিন তিল তিল করে জমতে জমতে একসময় বিস্ফোরণ
ঘটে উম্মুক্ত হয় সেই ক্ষেত্র! চতুর্থ পর্বের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ফুটে ওঠে সেই করুণ অপসারণের
প্রেক্ষাপট!!
Click here to read the story of the Legacy of Ram: Part4 on Pratilipi |
পঞ্চম খণ্ড- যবনিকাপাতের খণ্ড!
গন্ধর্বপ্রজাতির করুণতম বিলুপ্তিকরণ…কেমন ছিল তাঁদের শেষ বিদায়ের দিনগুলি? কি হয়েছিল ‘অলকা’ ধ্বংসের ঠিক আগের মুহুর্ত্তটায়? কিভাবে সরে গেলেন সেই চরিত্রগুলি, যারা হতে চলেছেন পরবর্ত্তী মানবসভ্যতার ভবিষৎ নায়ক?
-“কোটি কোটি বছর আগে পৃথিবীতে প্রথম প্রাণের বিকাশ হয় জলে। এক হিসেবে বলা চলে, মৎস্যরাই পৃথিবীর প্রথম প্রাণ। এরপর আসে উভচর কূর্মরা, যারা জলে ও স্থলে সমান বিচরণ করত। তারপর আসে বরাহ- সম্পূর্ণ স্থলচর প্রাণী। সবশেষে আসে উন্নত প্রজাতির দ্বিপদ বামন গোষ্ঠি। দেবতারা আনন্দিত ছিলেন এই প্রজাতির সকল স্তরগুলিকে সৃষ্টি করে…দানব, রাক্ষস, গন্ধর্ব…মানব, সব। আজকে এই দৃশ্যের বর্বরতা তাঁদের সকল আনন্দকে নিঃশেষ করতে বাধ্য। যে অস্ত্রের প্রচণ্ডতা নিমেষে থামিয়ে দেয় সকল প্রাণকে, যে অস্ত্রের বীভৎসতা ছাপিয়ে যায় তার পূর্বসূরীদের বহুগুণে, সেই অস্ত্রের না থাকাতেই মহাবিশ্বের মঙ্গল! দেবতাদের কাছে আমি অবশ্যই মিনতি করব- এই অস্ত্রের কোন অবস্থাতেই যেন আর কোন প্রয়োগ না ঘটে। নাহলে এইটাই শেষ স্মারক হবে ফাঁকা প্রান্তরের শোভা বাড়ানোর জন্য- একটি বর্ণহীন, মৃত টিয়াপাখি!”
-“…জ্যাঠামশাই…মহাসেনাপতি দ্যুহের ব্যোমযান দূর্ঘটনায়
পড়েছিল…সেনা-অবস্থান দেখবার
জন্য নিজ পরিধির বাইরে বেরিয়ে এসেছিলেন তিনি…এমন সময় আচমকা যেন বজ্রপাত ঘটে তাঁর ব্যোমযানে!
পার্থ! আমাদের জ্যাঠামশাই দ্যুহ আজ আমাদের মধ্যে নেই! তাঁর নশ্বর দেহ মাটি ছোঁয় নি,
আকাশেই লীন হয়ে গিয়েছে তা!!”
আরও একবার ‘নিস্তব্ধ কালরাত্রি’ নেমে এল যুদ্ধপ্রাঙ্গণে; তবে এবার পাণ্ড্র্যবশিবির লক্ষ্য করে। এই হৃদয়বিদারক সংবাদে পক্ষাঘাতগ্রস্তের মত দাঁড়িয়ে রইলেন সবাই- যেন চেতনা হারিয়ে গিয়েছে সকলেরই…!
-“…ব্যর্থ একটি জীবনের মর্মন্তুদ অবসান, অভয়ঙ্কর!
দুটি বিপরীত বিন্দুতে না দাঁড়ালে আমরা অবশ্যই পরষ্পর মিত্র হতাম। এ এক অদ্ভুত বৈপরীত্য,
যাতে বিদ্বেষের নীচে কোথায় যেন লুকিয়ে সুপ্ত একটুকরো শ্রদ্ধা! সমাজের প্রতি তীব্র ঘৃণা
ওঁকে দিয়ে ওঁর অগোচরে কাজ-”
আর কথা বলতে পারলেন না পার্থ; আবেগে অবরুদ্ধ হয়ে এল তাঁর গলা।
-“কোন ব্যক্তি ঘৃণা নিয়ে জন্মায় না, পার্থ!”- অবশেষে বেশ কিছুক্ষণের নীরবতা কাটিয়ে বলে উঠলেন অভয়ঙ্কর- “আমরা, সামাজিকরা, প্রতিনিয়ত তাঁর মধ্যে জাগিয়ে তুলি সেই ঘৃণা! আর ঘৃণার থেকেই জন্ম নেয় বিদ্বেষ। সেই আগুনে যখন এবার পোড়বার পালা আসে, তখন আমরা আঙুল তুলে চেঁচাতে থাকি সমানে। এই দোআঁশলা প্রবৃত্তির সমাধান কোথায়, তা আমরা জানিও না, জানতেও চাই না। বসুসেনকে তুলে নিয়ে যেতে হবে। জীবিত অবস্থায় না হোক, অন্তত ওঁর মৃতদেহটিকে আমাদের সম্মান দেখানো অবশ্য কর্তব্য…”
-“…গন্ধর্বজাতির ইতিহাসে হয়তো আমি ক্রূরতম খলনায়ক
হিসেবে চিহ্নিত হব ভাগ্নে, কিন্তু একমাত্র দেবতারাই সাক্ষী, কোন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে
অন্যের কর্মফলে বুকে পাথর বেঁধে ঘুরে বেরিয়েছি আমি! আজ আমার প্রতিজ্ঞা থেকে আমি মুক্ত,
আমার দায়িত্ব শেষ, এখন আর কোন প্রয়োজন নেই আমার এই অভিশপ্ত মাংস-চামড়া বয়ে বেড়াবার।
দেবতাদের সাক্ষী রেখে একজন মুক্ত, স্বাধীন পুরুষ হিসেবে আমি মৃত্যুবরণ করছি- এই আমার
সৌভাগ্য!!...”
- ‘দ্যা লেগ্যাসি অফ্
রাম- অন্তিম খণ্ড: দ্যা লোন ভয়েজ বিগিন্স (নিঃসঙ্গ
যাত্রার সূচনা)’
কিন্তু
শেষ খণ্ডটি তো শুধু গন্ধর্বদের অবসান দিয়ে নয়, তার সাথে মহর্ষি ব্যাসদেবের রাহুমুক্তির
পর্বও বটে, নয় তো কিভাবে সৃষ্টি হবে মহাকাব্য? বীরাকোচা- ‘লেগ্যাসি’ পর্বে মধ্য ও ল্যাটিন
আমেরিকার আরাধ্য যে দেবতাকে ‘খলনায়ক’ হিসেবে দেখানো হল, তিনি কি সত্যিই খলনায়ক ছিলেন?
-“বীরাকোচার সঙ্গে যা হয়েছিল তা কার্যত অন্যায়;
একে ‘মাৎসন্যায়’ বলে অভিহিত করলেও অত্যূক্তি
হবে না। কিছু দেবতার ষড়যন্ত্র ও উচ্চাভিলাষের পরিণতি অসম্ভব প্রতিভাবান এই দেবপুরুষটির
বিদ্রোহী হয়ে ওঠা।”
যদিও গল্পের পরিণতিতে একজন বিদ্রোহীর পরাভব দেখানোই বিধান, কিন্তু সঙ্গত নানা কারণে ‘বীরাকোচা’র পরিণতি ঠিক মেনে নেওয়া যায় না। এই বিষয়ে আপনাদের মন্তব্য পেলে সত্যিই বাধিত হতাম।
Click here to read the final part of The Legacy of Ram on Pratilipi |
আপাতত আমার প্রাণাধিক প্রিয় এই গল্পটির শেষ এখানেই, কিন্তু শুধু সার-মর্ম পড়ে যদি আপনারা ভাবেন মূল গল্পটি পড়া হয়ে গিয়েছে, তবে বিষয়টি অনেকটা ঐ ‘পকেট এডিশন’-এর মতই দাঁড়াবে! গোটা ‘লেগ্যাসি’ সমগ্রটি জুড়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পৌরাণিক, তা সে স্বদেশীই হোক বিদেশী, ব্যাখ্যাকে বিজ্ঞানের নিরিখে দেখবার চেষ্টা করা হয়েছে যেরকমটা আগে কখনও করা হয় নি বলেই আমার বিশ্বাস! সৃষ্টিতত্ত্বের ব্যাখ্যা, পৌরাণিক কিছু ঘটনার ব্যাখ্যা, মানব বিবর্তনের ইতিহাস বাইবেলের আলোকে, বৌদ্ধ মত অনুযায়ী বোধিসত্ত্বের পুনর্জ্ন্মের তত্ত্ব- সব কিছুকেই দেখবার চেষ্টা করা হয়েছে এক নতুন চোখে। এ দাবী কখনই তুলব না এগুলি সত্যি, কিন্তু মানবেতিহাস সাক্ষী- অনেক নতুন খোঁজ পাওয়া গিয়েছে অতীতে শুধুমাত্র কল্পনার ডানায় ভর করেই! সমস্ত প্রতি-যুক্তি সরিয়ে অনুরোধ করব- খোলা মনে আপনারা এই কল্পবিজ্ঞান সমগ্রটির আনন্দ নিন। এর কোন বাস্তবিকতা নেই, যদিও বাস্তবিক কিছু ঐতিহাসিক তত্ত্বের প্রয়োগ ঘটিয়েছি মাত্র উপন্যাস সমগ্রটিতে। কেমন লাগল তা অবশ্যই জানাবেন!
To stay updated, Like and Follow my Page
You may want to watch us on our YouTube Channel
In case if you want to twit me..
If you want to read my stories on Pratilipi, you are most Welcome
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আমাদের ব্লগগুলি আপনাদের কেমন লাগছে? অবশ্যই জানান আমাদের-