Bengali Audio story Science fiction | suspense |thriller| The Legend of Ram-Sesher Shutropat-Part6
এদিকে বীরভদ্র
আর লক্ষণের নেতৃত্বে
যখন মানব
ও বানর সেনা নেমে পড়েছে
রাক্ষসদের বিরুদ্ধে সরাসরি সন্মুখযুদ্ধে,
ঠিক তখনই মিথিলার জীবনে
ঘনিয়ে এসেছে এক ভয়ংকর
বিপর্যয়।
চতুর রাক্ষসরাজ
রাবণ অনুভব করেন এই
আক্রমণ কোন আকষ্মিক আক্রমণ
নয়;
বিশেষ করে যে কয়টি
শিবিরের পতন ঘটেছে সেখানে
প্রচুর বানরদের উপস্থিতির সংবাদ
তাঁকে সন্ধিগ্ধ করে তুলেছিল। তার সঙ্গে বিশ্বব্যাপী দেবতাদের
হঠাৎ-আগ্রাসন তাঁকে বাধ্য করেছিল
বিকল্প চিন্তায়। কয়েকদিন
ধরেই একটা বিকল্প রণকৌশলের
ব্যাপারে চিন্তা করছিলেন তিনি।
দেবতাদের অনুপ্ররণার
উৎসস্থল ভালোরকমই টের পেয়ে
গেছিলেন মহারাজ রাবণ! কাজেই সমস্যার
গোড়ায় আঘাত করবার একটা
মোক্ষম উপায় খুঁজছিলেন তিনি।
আগেই উল্লেখ
করা হয়েছিল যে মিথিলারা
এখন আর ‘সলপা’-র মূল
অংশে বসবাস করেন না। তাঁরা সরে এসেছিলেন বেশ
খানিকটা পশ্চিমে, ‘সলপা’-র সীমানা
ছাড়িয়ে যে তৃণভূমি তার
শেষপ্রান্তে, জঙ্গলের সীমানা বরাবর
অবস্থানে।
এখানে প্রবেশের
আগেই একটি জলাশয় পড়ে, তাতে
পদ্মফুল ফুটে থাকে এবং
আশেপাশের পরিবেশ বেশ মনোরম। বৈকালে প্রায়ই এখানে ঘুরতে
আসেন মিথিলা, এখানকার প্রাকৃতিক
নৈসর্গ তাঁর ভালো
লাগে; তাঁর
একাকীত্ব মোচন হয়। দুজন
মানুষকে এখানে রেখে দিয়ে
গেছিলেন বীরভদ্র; তাঁর নিরাপত্তা
ও দেখাশোনার জন্য। তাদেরকে
নিয়েই আসেন মিথিলা। তবে, বেশিক্ষণ
থাকেন না। অন্ধকার
হলেই এখানে জংলী জীবজন্তুর
আনাগোনা বেড়ে যায়, যদিও হিংস্র
জীবজন্তুর স্বাভাবিক বাসস্থান খুব
একটা নেই এখানে, এটাই যা
একটু ভরসা জোগায়। তারা
থাকে জঙ্গলের একেবারে গভীরে।
আজও এখানে
এসেছেন উনি, সঙ্গী অবশ্য
আজকে একজনই; অপরজন আছে
কুটীরে। এখানে বসে
খানিক্ষণ জলে নিজের আবছা
ছায়ার দিকে তাকিয়ে কি
একটা ভাবছিলেন তিনি অন্যমনষ্কের
মত। বীরভদ্র যুদ্ধে
যাওয়ার পর থেকেই একটু
আনমনা হয়ে পড়েছেন তিনি।
গণ্ডগোলটা হল
ফেরবার সময়। জঙ্গলের
কোল ঘেঁষে হঠাৎ তিনি
দেখতে পেলেন দাঁড়িয়ে আছে
বিরল প্রজাতির এক সুন্দর
স্বর্ণাভ হরিণ।
জঙ্গল সম্পর্কে
মিথিলার যদি পূর্ব অভিজ্ঞতা
থাকত তবে তিনি নিশ্চিত
বুঝতে পারতেন যে স্বর্ণাভ
হরিণ এদিককার কোন জঙ্গলে
পাওয়া যায় না; এর উৎপত্তি
আরও উত্তরে, সেই সেখানে
যেখানে তাঁর স্বামী ও দেবর
অস্ত্রশিক্ষা করেছেন। দেবতাদের
সেই আশ্রমের আশেপাশের জঙ্গল
ছাড়া কোথাও দেখা যায়
না এই হরিণ। তিনি
এটা বুঝতে পারেন নি, তাই
হরিণটি দেখে সতর্ক হওয়ার
পরিবর্তে তিনি আনন্দে বিহ্বল
হয়ে তাকে ধরতে ছুটে
চললেন সামনের দিকে।
হরিণটি আকারে
ছোট,
কিন্তু অপূর্ব তার গায়ের
সোনালি রঙ! শেষ বিকালের
পড়ন্ত আলোয় তার গা
দিয়ে যেন সোনা ঠিকরে
বেরোচ্ছে! এঁকে বেঁকে সামনের দিকে
ছুটে চলল হরিণ, পিছন পিছন
সবান্ধবে মিথিলা। উত্তেজনায়
তিনি খেয়াল করেন নি
যে জঙ্গলের অনেকটা ভিতরে
ঢুকে এসেছেন তিনি।
একটা ঝোপের
কাছে এসে হরিণটি অদৃশ্য
হয়ে যেতে সম্বিৎ ফিরে
পেলেন মিথিলা। শেষবারের
মত হরিণটিকে ধারে কাছে
একটু খুঁজলেন তিনি, কিন্তু পেলেন
না। পালিয়েছে ওটা। সম্পূর্ণ হতাশ হয়ে ফিরতে
যাবেন, এমন সময়ে খেয়াল করলেন
তাঁর মানব-সঙ্গীটি জঙ্গলের
দিকে তাকিয়ে চাপা রাগে
গর গর করছে।
এইবার একটু
ভয় পেয়ে গেলেন মিথিলা। বন্যপ্রাণীদের ষষ্ঠেন্দ্রিয় যে
অত্যন্ত সজাগ হয় তা
তিনি বিলক্ষণ জানেন, হাজার হোক
পড়াশোনা জানা বিদূষী মহিলা
তিনি, অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত
সাধারণ গান্ধর্বী তো তিনি
নন। নিশ্চই ধারে-কাছে
কোন বন্য জন্তুর আগমন
ঘটেছে, না হলে মানবটি এরকম
আচরণ করবে কেন?
মিথিলার দেহরক্ষীটি
তখনও চাপা রাগে গর্
গর্ করেই চলেছে একটানা; তার
দৃষ্টি সোজা মিথিলার সামনে
থাকা বুনো ঝোপটির দিকে। মিথিলা তাকে নিরস্ত করতে
চাইলেন, কিন্তু ততক্ষণে চাপা
গর্ গর্ পরিণত হয়েছে
ক্রুদ্ধ গর্জনে। এবারে
মানবটি একটা হুংকার ছেড়ে
ঝোপের দিকে এগিয়ে যেতেই
কি যেন একটা ঘটে
গেল;
ঝোপের মধ্য থেকে একটা
আগুনের শিখা বিদ্যুৎ চমকের
মত বেরিয়ে এসে আঘাত
করল মানবটিকে। টুঁ
মাত্র শব্দ বেরোল না
তার মুখ দিয়ে, কেবল তার
প্রাণহীন দেহ পড়ে গেল
মাটিতে। তার শায়িত
শরীর থেকে তখনও উদ্গত
হতে থাকল সাদা রঙের
এক গন্ধহীন ধোঁয়া!
এবার ঝোপ
ঠেলে বেরিয়ে এল এক
রাক্ষস। কোমরবন্ধনীতে লম্বা
ধাতব নলটিকে রাখতে রাখতে
মানুষের মৃতদেহটির দিকে একবার
তাকিয়ে পুনরায় মিথিলার দিকে
দৃষ্টি ঘুরিয়ে সে বলল-
-“এই বাঁদরের বাচ্চাগুলির
ভরসায় তোর বর আমাদের
সাথে যুদ্ধে নামতে চাইছে? এরা
তো দেখছি কোমরের কষিও
ঠিকমত বাঁধতে জানে না। ও হো!
কষিই বা আসবে কোথা
থেকে? এরা তো দেখছি সম্পূর্ণ
উলঙ্গ! তা এরা আবার যুদ্ধ
করবে কি করে রে?”
কিছু না
বলে ঘৃণা মিশ্রিত চোখে
রাক্ষসটির দিকে তাকিয়ে রইল
মিথিলা।
-“আমার নাম মারীচ। যে হরিণটা তোকে ভুলিয়ে
নিয়ে এসেছে এখানে সেটি
আমারই পোষা হরিণ। নিজের
আশ্রমের গণ্ডীর বাইরে অনেকটা
দূর চলে এসেছিস তুই। এখন তুই মহারাজ রাবণের
বন্দী। একটু পরেই
তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে
তোর।”
-“ভদ্রভাবে কথা বল
রাক্ষস! আমি রাজকন্যা, রাজকীয় রক্ত
আমার শরীরে। অভদ্র
কথা আমি সহ্য করতে
পারি না।”
-“তাই নাকি? তা ঠিক
কিভাবে তুই আমাকে দিয়ে
ভদ্রভাবে কথা বলাবি বলে
মনে করছিস রে গন্ধর্বী?”-
এই কথা বলে রাক্ষস
মারীচ এসে বুক চিতিয়ে
দাঁড়াল মিথিলার সামনে।
ঠিক এই
সময়তে মারীচের বাঁ দিক
থেকে একটা পাথুরে বর্শা
সিধে ধেয়ে এল মারীচের
মস্তক লক্ষ্য করে। মারীচ
কথা বলতে ব্যস্ত ছিলেন; তিনি
বুঝতে পারেন নি কখন
মিথিলার দ্বিতীয় দেহরক্ষী এসে
পড়েছিল অকুস্থলে। মিথিলার
বিপদ দেখে আর আর
চারিদিক খতিয়ে দেখার সুযোগ
পায় নি সে, হাতের বর্শা
সজোরে ছুঁড়ে মেরেছে মারীচের
মাথা লক্ষ্য করে! বর্শাটা সোজা
এল,
মারীচের মাথা এফোঁড়-ওফোঁড় করে
ফলার কিছুটা অংশ উল্টোদিক
দিয়ে বেড়িয়ে রইল। তৎক্ষণাৎ
মারা গেল মারীচ। মুখে
তখনো তার বিষ্ময়ের অভিব্যক্তি,
যেন নিজের মৃত্যুকে নিজেই
বিশ্বাস করতে পারছে না
সে!
মুক্তির আনন্দ
অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হল
না। অকষ্মাৎ মিথিলার
পিছন দিক থেকে একটা
তীক্ষ্ণ শিষের মত আওয়াজ
হল। মানবটি তখন
সদ্য বেরিয়ে এসেছিল গাছের
পিছনদিকের আত্মগোপন করবার জায়গাটি
থেকে; তার প্রাণহীন দেহ ধরাশায়ী
হল ভূমির ওপর। চমকে
মিথিলা পিছন দিকে তাকিয়ে
দেখেন, দাঁড়িয়ে আছেন এক
শালপ্রাংশু রাক্ষস! সারা চোখে-মুখে
তাঁর অভিব্যক্তিতে আভিজাত্যের
ছাপ।
-“কে আপনি?” জিজ্ঞেস করলেন
মিথিলা।
-“আমি রাক্ষসদের অধিপতি
মহারাজ রাবণ।”- একটু থেমে
নিয়ে যোগ করলেন তিনি- “আমি
এসেছি আপনাকে নিয়ে যেতে।”
-“নিয়ে যেতে! কোথায়?”
-“আপনি আমার বন্দী। এখন আসুন আমার সাথে।”
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আমাদের ব্লগগুলি আপনাদের কেমন লাগছে? অবশ্যই জানান আমাদের-