The Legend of Ram-Rise of a Species- Episode2 Part4
কেমন দেখতে ছিল ইক্ষকু নগরী? এই পর্বে আমরা এই নগরীর রূপ দেখতে পাব; তার সাথে সাড়ম্বড়ে বরণ করে নেব আমাদের উপন্যাসের দুই কেন্দ্রীয় চরিত্রকে; বোঝবার চেষ্টা করব কেমন ছিল তাঁদের জীবন, তাঁদের দর্শন, কেমন ছিল তাঁদের নিবিড় আত্মীয়তা। জানতে হলে অবশ্যই চোখ রাখুন এই পর্বে।
- Story, voice-over, Concept and Editing: Aritra Das
- Graphics: Shri Biswanath Dey
- Background music source: YouTube Audio Library
এই পর্বে পঠিত অংশটি দেওয়া হল নীচে। কেমন লাগল তা অবশ্যই জানাবেন:-
...নাতিউচ্চ টিলাটির ওপর থেকে ইক্ষকু নগরীর অংশবিশেষ চোখে
পড়ে। অগুন্তি ছোট ছোট বাড়ি-ঘর-দোর, তারপর ছোট সড়ক যা গিয়ে মিশেছে বিশাল সড়কে, তারপর
রাজপথে। এরপর একটা খোলা প্রাঙ্গণ। চারিদিক থেকে চারটি রাজপথ এসে মিশেছে ঐ খোলা প্রাঙ্গণে।
উন্মুক্ত প্রাঙ্গনের একদিকে বিরাট উঁচু রাজপ্রাসাদ, আরেকদিকে রয়েছে সারিবদ্ধ প্রশাসনিক
অতিথি-নিবাস। আর সবার ওপরে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে প্রসিদ্ধ ‘হাওয়া-মহল’। ঐখানেই সঞ্চিত
থাকে সম্বৎসরের খাদ্য। নাগরিকদের জন্য মজুত করা থাকে এই খাদ্যশষ্য। উঁচু এই মহলটির
গঠন অনেকটা দণ্ডের মতন। কেউ যেন একটা লাঠি বসিয়ে দিয়ে গেছে যার ওপরের দিকটি সূঁচালো।
শীর্ষবিন্দুর থেকে একটু নীচের অংশটি কিছুটা স্থূল; এখানে সর্বক্ষণ ‘উগ্র’অবস্থান করে
প্রতিরক্ষা ও নজরদারির কারণে। বহু দূর থেকে অগ্রসরমান শত্রুসৈন্য দৃষ্টিগোচর হয় এই
অংশের মধ্য দিয়ে। খাদ্য সঞ্চয় ও নজরদারি – দুইই করা সম্ভব এই ব্যবস্থায়। এছাড়া রাজপথের
দুধারে সুরম্য অট্টালিকাগুলি যথেষ্ট নয়নাভিরাম। নগরের যে অংশটুকু এতে প্রতীয়মান তা
সত্যিই চোখ জুড়িয়ে দেয়।
টিলার মাথায় বসে এক তরুণ নিবিষ্ট মনে একটা কচি ঘাসের ডগা
হাতে নিয়ে দাঁতে খুঁটছিল। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ এই তরুণ। ১৮-২০ বছর বয়স, কিন্তু বিরাট
চেহারা! বিরাট, কিন্তু সুন্দর। বালকটির মুখের মতন। শক্তপোক্ত শরীরের গঠন, তীক্ষ্ণ অন্তর্ভেদী
দৃষ্টি। বোঝাই যাচ্ছে যে সামনের দৃশ্যপটের সঙ্গে সে পূর্বপরিচিত, কারণ সেদিকে তাঁর
কোন নজরই ছিল না। পাশে বসা তাঁর অনুজ ভাই। তাঁর শরীরের শক্ত গঠন, বাহুর আকৃতি ও গড়ণ
আর চিতাবাঘের মত নির্মেদ শরীর বলে দিচ্ছে যে সে ক্ষিপ্র অনেক বেশি। প্রথম তরুণটি হলেন
বীরভদ্র; মহাসেনের অগ্রজ সন্তান। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন তাঁর অনুজ শ্রীমান সুমিত্রসেন।
বীরভদ্র আদর করে ভাইকে ডাকেন ‘মিতে’ বলে।
-“কি ব্যাপার বল তো দাদা –” জিজ্ঞাসা করে ওঠেন সুমিত্রসেন
– “কদিন ধরে তোকে খুব চুপচাপ দেখছি, কিছু হয়েছে নাকি?”
-“নাঃ” অন্যমনষ্কের মত উত্তর দিলেন বীরভদ্র।
-“কিছু একটা তো হয়েছেই, সেটায় আমি নিশ্চিত। তুই এত চুপচাপ
থাকিস না। কি হয়েছে বলবি না?”
খানিক নিস্তব্ধতার পর ভাইয়ের মুখের দিকে তাকালেন বীরভদ্র।
তাঁদের মধ্যে বয়সের তফাৎ খুব সামান্যই, কয়েক পলের এদিক-ওদিক। দুজনের মধ্যে বোঝাপড়াও
প্রবল, একে অপরের সঙ্গে পিঠোপিঠি সম্পর্ক। একে সাহস করে কিছু বলা যায়।
-“বাবার মধ্যে কয়েকদিন ধরে আচরণগত কোন প্রভেদ দেখতে পারছিস
মিতে?”
-“বাবার? হু, তা একটু পাচ্ছি বটে। উনিও চুপচাপ হয়ে গেছেন।
গতকাল তো মেজদা আর সেজদাকে পাঠিয়ে দিলেন অন্য কোন রাজ্যে। কেন বল তো?”
-“এবারে বোধ হয় আমাদের পালা। কে একজন সন্ন্যাসী এসে উঠেছেন
বাবার আতিথ্যে। শুনছি তিনি নাকি যাওয়ার সময় আমাদের নিয়ে যাবেন।”
-“নিয়ে যাবেন! কোথায়?”
-“জানি না! মা বলছিলেন আগেরদিন।”
এরপর দুজনেই একটু চুপচাপ হয়ে গেলেন আশু ভবিষ্যৎের কথা
ভেবে। অদূরে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে সুউচ্চ ‘হাওয়া-মহল’। দুজনেই তাকিয়ে রইলেন সেইদিকে।
অবশেষে মুখ খুললেন সুমিত্রসেন।
-“চল দাদা, চলে যখন যেতেই হবে তখন একটা শেষ প্রতিদ্বন্ধিতা
হয়ে যাক। আয় একটা দৌড় লাগাই! দৌড় শেষ হবে ঐ হাওয়া-মহলের শীর্ষে!!”
-“এই টিলার ওপর থেকে? খেপেছিস না পেট গরম হয়েছে?”
-“টিলার ওপর থেকে নয়; ঐ যে গোপাল মুদির দোকান দেখা যাচ্ছে,
ওখান থেকে।”
-“ধ্যুস!ভালো লাগছে না–”
-“আরে চল না! কিছুটা তো সময় কাটবে!!”
ইক্ষকু নগরীর সড়কপথে একটু পরেই সৃষ্টি হল এক বিচিত্র দৃশ্যের!
দুই রাজকুমার বীরভদ্র ও সুমিত্রসেন দৌড়-প্রতিযোগিতা করছেন; দুইধারে দাঁড়িয়ে পড়ে তাই
দেখছে লোকে। বড়ভাই বীরভদ্র বলশালী, সামান্য শ্লথ; কিন্তু দেওয়াল বেয়ে দৌড়নোর ব্যাপারে
তিনি এগিয়ে। অপর দিকে অনুজ সুমিত্রসেন চিতাবাঘের মত ক্ষিপ্র, গতির দৌড়ে তিনি এগিয়ে
কিন্তু সামনের বাধা অতিক্রমের ক্ষেত্রে তিনি সামান্য মন্থর। দুজনেই কপিথ্থপ্রবরের মত
এই বাড়ির দেওয়াল টপকে, ঐ বাড়ির ছাদ ডিঙিয়ে, একচালা দোকানঘরগুলির চালা লাফিয়ে অতিক্রম
করতে করতে এগিয়ে যেতে লাগলেন সামনের দিকে। শারীরিক কসরৎের দিক থেকে দুই ভাইই সমান নিপুণ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা সমস্বরে বাহবা দিতে লাগলেন দুই ভাইকেই।
অতঃপর এসে গেল ‘হাওয়া-মহল‘। দুইভাইই এসে দাঁড়ালেন তার
নীচে। এই হাওয়া-মহলেরই নীচের দিকের অংশে মজুত থাকে খাদ্যশষ্য। মাটির অনেকটা নীচে থাকে
সেই ঘর। তাঁদের উঠতে হবে ওপরতলায়, শীর্ষস্থানে। এখানে নজরদারি ঘরের ওপরে যে খোলা বৃত্তাকার
উন্মুক্ত প্রাঙ্গনটি আছে সেখানেই শেষ হবে প্রতিযোগিতা। দুজনেই চড়তে শুরু করে দিলেন
ওপরে।
গোলমাল পাকল মাঝামাঝি অংশে এসে। দুইভাইই বাইরের দেওয়াল
ধরে উপরে উঠছিলেন। কোথাও বেড়িয়ে আসা পাথরের টুকরো, বা সংযোগকারী কীলক, এগুলিকেই ব্যবহার
করছিলেন তাঁরা এর জন্য। এরকমই একটা আলগা পাথরের টুকরো বেড়িয়ে ছিল; উত্তেজনায় বুঝতে
পারেননি সুমিত্রসেন, পাথরের টুকরোটাকে ধরতে গিয়ে হাত পিছলে গেল। পড়েই যেতেন, কিন্তু
নীচে ছিলেন বীরভদ্র। ডানহাত বাড়িয়ে ধরে ফেললেন আদরের ‘মিতে’কে, তারপর তাকে ঝুলিয়ে দিলেন
নীচের দিকে একটা পাথরের অবলম্বনে। পাথরটিকে অবলম্বন হিসেবে পেয়ে ধরে ফেললেন সুমিত্রসেন।শ্বাস
টেনে কৃতজ্ঞতা জানাবার জন্য মুখ ওপরে তুলে দেখতে পেলেন অনেকটা উঠে গিয়েছেন বীরভদ্র।
ব্যাস! আবার শুরু হল পথ বেয়ে ওপরে ওঠা!!
অবশেষে, বীরভদ্রই জিতলেন প্রতিযোগিতায়। দুই ভাই নির্বিঘ্নে
ওপরে উঠে এলেন বাকি পথ বেয়ে। ধপাস্ করে সমতল মেঝের ওপর শুয়ে খানিক্ষণ শ্বাস নিলেন তাঁরা;
দম ফেরৎ পেতে কিছুটা দেরি হল। অবশেষে প্রথম কথা বললেন বীরভদ্র –
-“বাবা একটা কথা প্রায়ই বলেন, যারা চোখ খুলে চলে তারাই
প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়। ওপরের আলগা পাথরটি দেখতে পেলে তুইই কিন্তু জিতে যেতিস মিতে।”
হাঁপাতে হাঁপাতে কাঁধ ঝাঁকালেন সুমিত্রসেন। এরপর আস্তে
আস্তে উঠে দাঁড়ালেন দুজনেই। তাকালেন সামনের দিকে।
সামনে, পিছনে, চারিদিকে তখন উন্মুক্ত বিশাল ইক্ষকু নগরী;
আপন সৌন্দর্যের ডালি নিয়ে সে এখন চোখের সামনে বিদ্যমান। অপরূপ সে সৌন্দর্যের প্রতিটি
পরত যেন ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছে তাঁদের চোখের সামনে! নগরীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত
এই উচ্চতম স্থানটি থেকে পাখীর দৃষ্টিতে গোটা নগরীই এখন তাঁদের চোখের সামনে। এ দৃশ্য
সত্যিই অতুলনীয়! কিছুক্ষণ কোন কথা বলতে পারলেন না কেউই!
-“জীবনটাও যেন এমনি সুন্দরই থাকে রে দাদা!”– অবশেষে বললেন
সুমিত্রসেন।
-“ঠিক। তার সঙ্গে এটাও যোগ কর, কোন অবস্থাতেই আমরা যেন
পরষ্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন না হই।”
নীচে তখন গোধূলির আলোয় অপরূপ সাজে সজ্জিতা ইক্ষকু নগরী প্রস্তুত আসন্ন রাত্রিকে স্বাগত জানাবার জন্য।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
আমাদের ব্লগগুলি আপনাদের কেমন লাগছে? অবশ্যই জানান আমাদের-